খুলনা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অধ্যাপককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার (৯ মে) রাত ৯টায় জবি শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সাক্ষাতকালে মন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে মোট ৯ সদস্য ছিলেন। এ সময় তারা খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেন। মন্ত্রী তাৎক্ষণিক খুলনার ডিআইজিকে ফোন করে আসামিদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম মুঠোফোনে রাত ১১টা ৩৪ মিনিটে বাংলানিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আমাদের আবেদন আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন। পেপারকাটিংসহ যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে এসেছি। মন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বলেছেন এটার রিয়াকশন হবে। এসময় তিনি খুলনার ডিআইজিকে ফোন করে মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদসহ আসামিদের গ্রেফতার করতে নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর নজরুল ইসলামের ওপর হামলা চালান মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। গত শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাত ১০টায় মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পুলিশ পাহারায় গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
শনিবার (৬ মে) ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কয়রা থানায় মামলা করেন।
শনিবার রাতেই জেলার কয়রা লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসার হেড ক্লার্ক কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব-৬ এর সদস্যরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৪ মে জয়পুর শিমলার আইট দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় দুটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের স্ত্রী ওই মাদ্রাসার সভাপতি। স্ত্রী সভাপতি হলেও সার্বক্ষণিক নিজে উপস্থিত থেকে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বদলবলে প্রভাব বিস্তার করায় অধিকাংশ প্রার্থী ভয়ে পরীক্ষায় অংশ নেননি। নিয়োগ বোর্ডের কোনো পদে না থাকলেও ক্ষমতার দাপটে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বে-সিন-মিম বায়লারহারানিয়া আলিম মাদ্রাসায় ৫টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যাৎসাহী পদে রয়েছেন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। ওই মাদ্রাসায়ও সব পদে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। আয়া পদে অপ্রাপ্ত বয়স্ক একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলে জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম দেয়। পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়া মরিয়াম নামে একজনকে আয়া পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় ইউপি সচিব ইকবাল হোসেনকে তার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে পরিষদের কক্ষে আটকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন পিটিয়ে আহত করেন। এ ঘটনায় ইউপি সচিব বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মারধরের মামলা করেন। পরে চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এলাকাসীর অভিযোগ প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় থাকায় চেয়ারম্যান অপরাধ করে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৪ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড