ঢাকা: তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কিয়াকপিউ বন্দরের মাঝ দিয়ে স্থলভাগে ওঠে আসতে পারে। এসময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠতে পারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।
উত্তর ভারত সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ সংস্থা আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া বিষয়ক কেন্দ্র (আরএসএমসি) এই তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরও এই সংস্থার সদস্য।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরাধীন নয়াদিল্লি ভিত্তিক এই কেন্দ্রের আবহাওয়া বিজ্ঞানী আনন্দ কুমার দাশ জানিয়েছেন, বুধবার (১০ মে) রাতে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে, তখন গতি ওঠে যাবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরের দিকে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে ‘মোখা’। তখন ঝড়ের কেন্দ্রে গতি ওঠে যাবে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত আর রাতেই এটি রুপ নেবে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে, যখন কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
শুক্রবার (১২ মে) দুপুরের দিক ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত, রাতে আরো শক্তি সঞ্চয় হয়ে বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাবে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। এরপর থেকেই মূলত শক্তি কিছুটা ক্ষয় করতে শুরু করবে ‘মোখা’।
শনিবার (১৩ মে) দুপুরের দিকে ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ নেমে আসবে ১৬০ কিলোমিটারে, রাতে যা ১৪০ কিলোমিটার হবে। এরপর রোববার (১৪ মে) দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা রাতে নেমে আসবে ৭০ কিলোমিটারে। এদিন দুপুরের দিকেই তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি নিয়ে কক্সবাজার ও কিয়াকপিউ উপকূলে আঘাত হানবে ‘মোখা’।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ত্রিপুরা, মিজোরামে শনিবার ও রোববার ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে। আর নাগাল্যান্ড, মনিপুর এবং আসামের ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে রোববার। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এ সময়।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক এ বিষয়ে বলেন, আমাদের গাণিতিক মডেল বলছে ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ওঠে আসার জন্য কক্সবাজার, টেকনাফ এসব এলাকা এবং আশেপাশের মিয়ামানের এলাকগুলো নির্দেশ করছে। তবে এটি শতভাগ নিশ্চিত করা বলা সম্ভব নয়। কেননা, ঘূর্ণিঝড় যে কোনো সময় গতিমুখ পরিবর্তন করতে পারে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. ছাদেকুল আলম এ বিষয়ে বলেন, যদি এটি প্রথম দিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে যায়, তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলে আসবে। আর যদি আরো উত্তর দিকে যাওয়ার পর গতিমুখ পরিবর্তন করে তবে বাংলাদেশে উপকূলে আসবে। এক্ষেত্রে আগামী রোববার (১৪ মে) উপকূলে ওঠতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী আনন্দ কুমার দাশ জানিয়েছেন, প্রথম দিকে বৃহস্পতিবার (১১ মে) এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। পরবর্তীতে গতিমুখ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলের দিকে আসবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নামটি ইয়েমেনের দেওয়া। কফির জন্য বিখ্যাত স্থানীয় একটি বন্দরের নাম ‘মোখা’। কালক্রমে সেখানকার কফির নামকরণও করা হয়েছে ‘মোখা’। ইংরেজিতে শব্দটি Mocha লেখা হলেও এর উচ্চারণ হচ্ছে Mokha।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ(escap) আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম ঠিক করে। এক্ষেত্রে এসকাপ সদস্যভূক্ত ১৩টি দেশের দেওয়ার নামের তালিকা থেকে পর্যাক্রমে এক একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে যে তালিকা রয়েছে সেখানে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া আছে। এর মধ্যে মোখা নামটি ১৩ নম্বর। অর্থাৎ ওই তালিকা থেকে পরবর্তী ১৫৬ ঝড়ের নাম ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
ইইউডি/ এসএম