রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলায় অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ঠিকাদার, ইউপি সদস্যসহ নয়জনের নামে মোট চারটি মামলা করেছে দুদক।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এ মামলাগুলো দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাঙামাটি সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহিদ কামাল।
জাহিদ কামাল বলেন, রাঙামাটির দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক আহমেদ ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করেন।
মামলাগুলোর এজাহার সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির বরকল উপজেলার ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়নের কামিনী চাকমার জমির ওপর মৎস্য বাঁধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এ কাজে সংশ্লিষ্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সমৃদ্ধি এন্টারপ্রাইজের নামে মামলা দায়ের করা হয়। এ প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয়।
অন্য এজাহারে বরকল উপজেলাধীন সুবলং বাজারে পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণসহ গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় উপরোক্ত তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহেন রাখাইনের নামে মামলা করা হয়। এ প্রকল্পটিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৃহীত হয় এবং প্রকল্পের ব্যয় ধরা ৭ লাখ টাকা।
তৃতীয় এজাহারে বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিঁড়ি নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। মামলায় তিন প্রকৌশলীর পাশাপাশি জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে সিলেটে কর্মরত) কাজী আবদুস সামাদ, ঠিকাদার অমলেন্দু চাকমা ও জেলা পরিষদের সদস্য সবির কুমার চাকমার নামে মামলা দায়ের করা হয়।
৪ নম্বর এজাহারে বরকল উপজেলাধীন পূর্ব এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ থেকে হারুন টিলা এলাকার আহাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। প্রকল্পটি গৃহীত হয় ২০১৬-১৭ সালে এবং প্রকল্প ব্যয় ছিল ১০ লাখ টাকা। তদন্তে উক্ত স্থানে কোনো মৎস্য বাঁধ এবং হারুন টিলা নামে কোনো জায়গাও পাওয়া যায়নি। তদন্তে এটি অস্তিত্বহীন ও ভুয়া প্রকল্প ছিল বলে জানা যায়।
আসামিরা হলেন বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় চাকমা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ঠিকাদার নাংচিং এন্টারপ্রাইজের চিংহেন রাখাইন, ৪ নম্বর ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মামুনুর রশীদ এবং জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা।
তারা মিলেমিশে টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং অসদাচরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে দণ্ড বিধির ৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলাগুলোর এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া মামলার বিষয়ে ফোনে বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। মামলা হয়েছে বলে শুনেছি।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা ফোনে বলেন, আমিও আপনার মতো শুনেছি, মামলা হয়েছে। তবে এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি সরাসরি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে প্রকল্প দৃশ্যমান নেই এবং এলাকাবাসী সাক্ষ্য দেন, তবেই মামলা হতে পারে। তবে আমি আইনিভাবে মোকাবিলা করব। আশা করছি সাংবাদিকরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে সঠিকটা লিখবেন।
রাঙামাটির দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এজাহার অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২৩
এসআই