মাদারীপুর: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংস হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দ্রুত আইনের আওতায় এনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানিয়েছে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে মাদারীপুর জেলার শিবচরে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টার দিকে শিবচর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা নাদিমকে হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে সাংবাদিক সাগর-রুনিসহ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সব সাংবাদিকদের হত্যার বিচার ও দেশের সব সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
এ সময় শিবচর প্রেসক্লাবের সভাপতি একেএম নাসিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ শাখাওয়াত হোসেন, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শিব শংকর রবিদাস, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেল ৬টার দিকে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম শিবচর শাখা ও শিবচর রিপোর্টার্স ইউনিটির আয়োজনে শিবচর পৌর এলাকার ৭১ চত্বরে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও র্যালি বের করে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম শিবচর শাখা। শিবচর কলেজ মোড় থেকে র্যালি বের হয়ে ৭১ চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে মানববন্ধনে অংশ নেয় সংগঠনটি।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবুল খায়ের খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- শিবচর শাখার সভাপতি অপূর্ব জয়, সাধারণ সম্পাদক সালোয়ার হোসেন পথিক, সাংবাদিক সাইদুজ্জামান নাসিম, যুগ্ম সম্পাদক এস এম দেলোয়ার হোসাইন, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপ্লব, দপ্তর সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম সাংবাদিক মোস্তফা, জায়েদ ইবনে শহিদ, রাহাত হোসেন, রকিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, শিবচর রিপোর্টার্স ইউনিটির আহ্বায়ক রফিকুল রাজার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবু সালেহ মুছার সঞ্চালনায় পৃথক মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- সকালের সময়ের শিবচর প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন লাবলু, মানবজমিনের শিবচর প্রতিনিধি বিএম হায়দার আলী, দৈনিক মাতৃভূমির শিবচর প্রতিনিধি শাহিন বিন আনিছ।
এ সময় বক্তারা বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিচারহীনতার কারণে গোলাম রাব্বানী নাদিমের মতো সাংবাদিককে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। আমরা সরকারকে আমাদের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাংবাদিকের মরদেহ রাতে তার নিজবাড়ি গরুহাটিতে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরের জামালপুর করেসপন্ডেন্ট ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বকশিগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর অপকর্ম নিয়ে নিউজ করার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নাদিমের স্বজনরা।
মৃত্যুর আগে নাদিম নিজেও হামলার শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে গত ১০ মে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘দুইবার বিয়ের পরও সন্তান-স্ত্রীকে অস্বীকার করছেন ইউপি চেয়ারম্যান!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১৪ মে তার স্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ‘আমি আমার স্বামী চাই, একসঙ্গে সংসার করতে চাই’ শিরোনামে বাংলানিউজে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০ মে সাবিনা ইয়াসমিন তার স্বামী মাহমুদুল আলম বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার অথবা পদ থেকে তার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। বাবু জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়েও বাংলানিউজে ‘আ.লীগ থেকে স্বামীর বহিষ্কার চেয়ে স্ত্রীর আবেদন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
এর আগে, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে জামালপুরের নাদিমসহ চার সাংবাদিকের নামে মামলা করেন সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। ৩০ মে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন।
নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ,ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আগেও তিনি নানাভাবে তাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এরও আগে গত ১১ এপ্রিল হামলার শিকার হয়েছিলেন নাদিম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের সমর্থকরা এ হামলা করেন। গত ১০ জানুয়ারি ‘বকশীগঞ্জে আ. লীগের কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের জেরে হামলার শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিনা বেগমের গ্রুপের লোক বলেও নাদিমের পরিবারের অভিযোগ।
আরও পড়ুন
নাদিম হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসআরএস