ঢাকা: ঈদের ছুটি বাড়ি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার। কিন্তু কাজে যোগ না দিয়েই আবার বাড়ির পথ ধরেছেন তিনি।
তবে প্রিয়জনের টানে ছুটি পেয়ে কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের চিরচেনা সেই বাড়িফেরা আর নয়, এবার প্রিয় ঠিকানায় শেষবারের মতো ফিরছে তার নিথর দেহ। চিরতরে ছুটি নিয়েই কর্মস্থল ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন পুলিশের এ সদস্য।
শনিবার (১ জুলাই) ভোরে ফার্মগেট সেজান পয়েন্টের সামনে ছুরিকাঘাতে মারা যান কনস্টেবল মনিরুজ্জামান।
গ্রামের বাড়ি শেরপুরে ঈদের ছুটি কাটিয়ে সকালে ঢাকায় ফিরেন তিনি। ট্রেনে করে ঢাকায় এসে তেজগাঁও রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
কে বা কারা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ছিনতাইকারীরা এ ঘটনায় ঘটাতে পারে।
এদিকে, ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামানে তালুকদারের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
এরপর মরদেহ নিহতের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ। নিহতর স্বজনরা এরই মধ্যে মরদেহ নিয়ে মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদীর করুয়া গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
জানা গেছে, মনিরুজ্জামানের বাম হাত, কাঁধ ও পায়ে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একাধিক ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (১ জুন) বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মনিরুজ্জামানের ফুফাতো ভাই জাকিরুল আলমের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
মরদেহ নিয়ে শেরপুরে রওনা দেওয়ার আগে জাকিরুল আলম বলেন, মরদেহ আমরা বুঝিয়ে পেয়েছি। মরদেহ নিয়ে এখন মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছি। গ্রামের বাড়িতে মনিরুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, মৃত্যুসংবাদে মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। সে আজ সকালেই বাড়ি থেকে এসেছিলো ডিইউটিতে যোগদান করার জন্য। এরমধ্যেই তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না।
বাড়িতে মনিরুজ্জামানের স্ত্রী, দুই ছেলে সন্তান ও মা-বাবা আছেন। তার বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা কাশেম তালুকদার। মনিরুজ্জামান পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
মনিরুজ্জামান ২০০২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ বাহিনী যোগদান করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ জানান, শনিবার (১ জুলাই) ভোর ৪ টা ১৬ মিনিটে সেজান পয়েন্টের সামনে একজনকে ছুরিকাঘাতের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কনস্টেবল মনিরুজ্জামান ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন, তবে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাত কি-না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, ছুরিকাঘাতে পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাত নাকি অন্য কিছু বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৩
পিএম/জেএইচ