কক্সবাজার: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যরা।
এ সময় তারা বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দানের জন্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং কক্সবাজার ফিরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তারা।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ করেছেন। রোহিঙ্গারা তাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়া, লেখা-পড়ার ব্যবস্থা, বর্তমানের জীবনযাপন নিয়ে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান।
এসব বিষয় প্রতিবেদন আকারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবহিত করার কথা বলে তিনি বলেন, এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার উদাহারণ তৈরি করেছেন। এর জন্য আমরা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
প্রতিনিধি দলের সদস্য রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিক বলেছেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে যে তথ্য পেয়েছি, তা লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হবে।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয় এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ সংকট মোকাবিলা ও উত্তরণের জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রকে একযোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানাই।
এ সময় ২ কংগ্রেস সদস্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিতে কাজ করার আশ্বাসও প্রদান করেন।
এর আগে সকালে দুই কংগ্রেস সদস্যের নেতৃত্বে ১১ সদস্যর প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।
সকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমন্বয় সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের অফিসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম সহ ইউএন এর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরে সেখান থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যান।
এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ১২ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম, ১১ নম্বর ক্যাম্পে শরণার্থীদের লার্নিং সেন্টার, জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত ই-ভাউচার সেন্টার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার শেল্টার সাইড পরিদর্শন করেন। দুপুরে কংগ্রেস প্রতিনিধি দল কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে এ সময় সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার আকুতি
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসা দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কাছে নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে উখিয়ার ১১ নম্বর রোহিঙ্গা শিবির রোহিঙ্গা নেতারা লিখিত আবেদনে এসব আকুতি জানান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মো. জুবায়ের জানান, রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে আমরা মার্কিন কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদন দিয়েছি।
আবেদনে জানিয়েছি, আমরা যত দ্রুত সম্ভব নিজদেশ মিয়ানমারে, নিজের ভিটেবাড়িতে ফিরতে চাই। কিন্তু ৬ বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। আমরা মর্যাদা ও সন্মানের সঙ্গে নিরাপদে মিয়ানমার ফিরে যেতে চাই।
জুবায়ের বলেন, আমেরিকা চাইলে জাতিসংঘসহ অন্যান্যদেশকে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের নিজ ভিটেবাড়িতে ফিরিয়ে নিতে পারবে। আমরা তাদের কাছে সেই দাবি জানিয়েছি।
কক্সবাজার অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে বৈঠকে তারা রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
আমরা আমাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নানা সংকটের বিষয়ে তুলে ধরেছি। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের খাবারের বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তারা খুব সমস্যায় আছে এ কথা আমরা তাদের জানিয়েছি।
বৈশ্বিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি রেশন বাবদ রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু বরাদ্দ দুই দফা কমিয়ে ১২ ডলার থেকে ৮ ডলার করা হয়েছে। বিষয়টি তাদের বলার পর, এ বিষয়ে তারা আলাপ আলোচনা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের কাছে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার আকুতি
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
এসবি/জেএইচ