ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সাজা শেষ হলেও ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি ৬ জেলে

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
সাজা শেষ হলেও ভারতের কারাগারে বন্দি বাংলাদেশি ৬ জেলে

পাথরঘাটা (বরগুনা): বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করার অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেছেন বাংলাদেশি ছয় জেলে। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও এখনো দেশে ফিরতে পারেননি তারা, বন্দি আছেন ভারতীয় কারাগারে।

 

পরিবার পরিজন ফেলে তিন বছর আট মাস ধরে জেলেরা কারাগারে আছেন।

কারাগারে আটক জেলেরা হলেন পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আমির হোসেন জোমাদ্দারের ছেলে মো. বেলাল মাঝি, দণি জ্ঞানপাড়া গ্রামের সুলতান চৌকিদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, তালুক চরদুয়ানী গ্রামের আবদুর রব জোমাদ্দারের ছেলে মো. এমাদুল হক, মৃত হাফেজ জোমাদ্দারের ছেলে মো. শাহিন, জ্ঞানপাড়া গ্রামের আতাহার আলীর ছেলে আবদুল হক ও পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী এলাকার বাহাদুর চাপরাশির ছেলে মো. ইমরান চাপরাশি।  

ট্রলারটির মালিক পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের মো. তৌহিদুল ইসলাম।

কারাগারে বন্দি মো. শাহিনের বাবা হাফেজ জোমাদ্দার ছিলেন জেলে। তিনি ২০১২ সালে সাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে জলদস্যুদের গুলিতে নিহত হন। এরপর পরিবারের হাল ধরেন তার ছেলে শাহিন। তিনি সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এখন কারাগারে বন্দি। সাগরে যাওয়ার সময় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তার বয়স  ছিল ১৬ বছর ৯
মাস।

তিন বছর আট মাস ধরে সন্তানের পথের দিকে তাকিয়ে আছেন শাহিনের মা আয়শা বেগম, তিনি জানান, সাগরে জলদস্যুদের গুলিতে স্বামী হারিয়েছেন। তিন সন্তানসহ তিনি কষ্টে দিনযাপন করছিলেন। পরে পরিবারের দায়িত্বভার এসে পড়ে ছেলে শাহিনের ওপর। শাহিনও সাগরে মাছ ধরাকে পেশা হিসেবে নেন। এখন সেই ছেলে ভিনদেশে বন্দি। তাই নির্ঘুম
রাত কাটান তিনি। অভাবে চলে সংসার।

পাথরঘাটা পৌর এলাকার অধিবাসী মো. হারুন জানান, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর এফবি মারিয়া নামক ট্রলারে সাগরে মাছ ধরতে যান ছয় জেলে। তাদের মধ্যে আবদুল হক নামে এক জেলে তার ভগ্নিপতি। বোনের পরিবারের খরচ এখন তিনিই দেন।  

২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর পাথরঘাটায় দেশের বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে মাছ শিকার করতে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করে ট্রলারটি। কয়েক ঘণ্টা পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়লে স্রোতে ভারতীয় জলসীমা অতিক্রম করে। একপর্যায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ভারতীয় জলসীমায় অবস্থান করছিল ট্রলারটি। ওই সময় ভারতীয় বনবিভাগের সদস্যরা
অনুপ্রবেশে অভিযোগে ট্রলারসহ ছয় জেলেকে আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ তাদের নামে মামলা দিয়ে দনি ২৪ পরগনা জেলার বাড়ইপুর কারাগারে পাঠায়।  

পরে ভারতীয় এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ তথ্য ট্রলার মালিককে জানানো হয়। পরে ছয় জেলের নাম উল্লেখ করে পাথরঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ট্রলার মালিক তৌহিদুল ইসলাম।  

পরে জলসীমায় অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের তিন বছর করে জেল হয়।

গত প্রায় তিন বছর আট মাসে হারুন তার ভগ্নিপতি বন্দি আবদুল হকের জন্য অনেক তদবির করেছেন।

বরগুনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়েছেন। কথা বলেছেন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে।  

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, শুধু ছয় জেলেই নন, অনেক জেলে ভারতের কারাগারে রয়েছেন। আমরা একাধিকবার ভারতে গিয়ে দূতাবাসে কথা বলেছি, কিন্তু তাদের ছাড়ার
ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তারপরও আমরা চেষ্টায় রয়েছি।

বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, ছয় জেলেকে ফিরিয়ে আনতে ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি এখন ভারতেরয়েছেন। তিনি জেলেদের মামলা ও আদালতের রায়ের কাগজপত্র নিয়ে ভারতে
বাংলাদেশ দূতাবাসে যাবেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা নিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।