ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোর আকাশকে পিটিয়ে হত্যার মূলহোতা সাইট ইঞ্জিনিয়ার শান্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
কিশোর আকাশকে পিটিয়ে হত্যার মূলহোতা সাইট ইঞ্জিনিয়ার শান্ত

ঢাকা: রড চুরির অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশকে (১৪) নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মূলহোতাসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার মধ্যে দু’জনকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও তিনজনকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-২ গ্রেপ্তার করছে।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, কিশোর আকাশকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তার আসামিরা। তারা জানান, এ ঘটনার মূলহোতা সাইট ইঞ্জিনিয়ার শান্ত।  

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বাবু (২১) ও মো. আব্দুল বারেক বাবুকে (২৩) গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।  

অন্যদিকে একই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত, ফিরোজ ও অপর এক আসামিসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব।  

র‌্যাব জানায়, রড চুরির অভিযোগ দিয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিশোর আকাশকে বেধরক মারধরের মূলহোতা ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত। তিনি টিক্কাপাড়া বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মূলত তার নির্দেশনায় ওই ভবনের শ্রমিক ও সিকিউরিটি গার্ডরা মিলে শিক্ষার্থী আকাশে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিলেন।  

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বাংলানিউজকে বলেন, বর্বরোচিত ও নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মারধরের পরিকল্পনাকারী ও মূলহোতা মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২ ব্যাটালিয়নের একটি টিম।  

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মোয়াজ্জেম হোসেন প্রান্ত মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিস্তারিত আগামীকাল শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।

নির্যাতনের একটি স্থিরচিত্রে দেখা যায়, ভবনের নিচে একটি ঝুলন্ত বাঁশের সঙ্গে কিশোর আকাশের দুই হাত ও দুই পা মধ্যযুগীয় কায়দায় দড়ি দিয়ে বেঁধে তার শরীর ঝুলিয়ে রাখা। এবং ঝুলন্ত অবস্থায় লোহার রড, লাঠি ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বেধরক মারধর ও নির্যাতন করা হয় আকাশের ওপর। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আকাশের শরীরে জখম করেন ঘাতক আব্দুল বারেক বাবু। আর পাশেই একটি চেয়ারে বসা ছিলেন জহিরুল ইসলাম বাবু। তার হাতেও ছিল লোহার রড।  

নির্যাতনের ফলে কিশোর আকাশের শরীরে অসংখ্য গুরুতর জখমের সৃষ্টি হয়। পরে ফোন পেয়ে আকাশের ফুফু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। পরে ভোরের দিকে আকাশের মৃত্যু হয়।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বাংলানিউজকে বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার ভুক্তভোগী কিশোর আকাশ তার বাসা থেকে বের হন। রাতে আর বাসায় ফেরেনি। পরে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৬ টা ১০ মিনিটে ভুক্তভোগীর ফুফুর মোবাইলফোনে অভিযুক্ত জহিরুল ফোন করে আকাশকে বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিয়ে যেতে বলেন। খবর পেয়ে ওই স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনে যান ফুফু এবং সেখানে থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ আহত অবস্থায় পড়ে থাকা আকাশকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। ঘটনার কিছুক্ষণ পর কিশোর আকাশের সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা, নিথর ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এর পরই আকাশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।  

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আকাশের ফুফু মালতী আক্তার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিশোর হত্যার বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদসহ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জহিরুল ও বারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতার আসামি জহিরুল ও বারেককে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।  

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে আকাশকে মোহাম্মদপুর থানাধীন টিক্কাপাড়া বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন প্লটে চোর সন্দেহে সেখানে থাকা নিরাপত্তাকর্মী এবং নির্মাণ শ্রমিকরা আটক করে। পরে রাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বেধরক মারধর করে। এতে ভুক্তভোগী আকাশ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং পরে বাসায় যাওয়ার পর ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে সে মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনা ভুক্তভোগীর ফুফু মালতী আক্তার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

নিহত আকাশ কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার গুজাইদ্দা গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। আকাশের মায়ের নাম মৃত আম্বিয়া বেগম। সে বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টিক্কা পাড়ার পানির পাম্পের গলির ১৫/১৫ সি, ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে বসবাস করত।  

** মোহাম্মদপুরে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

** মোহাম্মদপুরে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা: মূলহোতাসহ আটক ৩

** রড চুরির অভিযোগে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার ২

বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২৩
এসজেএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।