ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাবারে যে রহম মারছে ওগোরে হেইরহম মারতে হবে’ 

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
‘বাবারে যে রহম মারছে ওগোরে হেইরহম মারতে হবে’  ছেলেকে হারিয়ে বাবা শফিকুল ও স্বজনদের আহাজারি, ইনসেটে নিহত হাসিব

পাথরঘাটা (বরগুনা): ‘ও বাবা...মোর বাবায় আর কতা কইবে না, মোর বাবায় আর আব্বা কইয়া ডাকবে না। মোর বাবারে এমনভাবে মারছে ওরা কি মানুষ‌।

মোর বাবারে যে রহম মারছে ওগোরে হেইরহম মারতে হবে। ওদের বিচার চাই। ’

এমন আর্তনাদ করে কথাগুলো বললেন পাথরঘাটায় নির্মমভাবে খুন হওয়া হাসিবুল ইসলামের বাবা শফিকুল ইসলাম।  

কিশোর গ্যাংয়ের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় হাসিবুল ইসলাম (১৩)। পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে।

হাসিবের বাবা শফিকুল ইসলাম পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সামনে একটি ছোট চায়ের দোকান দেন। কয়েকদিন আগে শফিকুল অসুস্থ হলে ও মাদরাসা বন্ধ থাকায় দোকানে বসতো হাসিব।  

হাসিবের বাবা শফিকুল বলেন, মোর বাবায় কইছে আব্বা তুমি তো অসুস্থ আমি দোকানে বসি। মোর বাবায় দোকানে যাইবে আর এই অবস্থা অইবে কোনদিন ভাবি নাই। মোর বাবারে এইরহম খুন করবে বুঝি নাই। মোর বাবারে যে রহম মারছে ওগো হেইরহম মারতে হবে। ওদের বিচার চাই।  

পাথরঘাটা সিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ. রাজ্জাক বলেন, হাসিব মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ও অত্যন্ত ভদ্র ছিল। কেন যে খুন করা হলো বুঝতে পারছি না। আমরা এখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত আছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে এবং সুষ্ঠু বিচার চাই।

হাসিব হত্যাকাণ্ডে করা মামলায় আসামিরা হলেন- উপজেলার গহরপুর গ্রামের মহিউদ্দিন ফরাজীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির (১৯), দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম কাজীর ছেলে আব্দুর রহিম কাজী (৪৮), হোগলাপাশা গ্রামের ইউনুস মুন্সির ছেলে আব্দুর রহিম মুন্সী (৩৫), বরগুনার হেউলিবুনিয়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (৩৪), হোগলাপাশা গ্রামের আলী আকবর মুন্সির ছেলে মো. ইউনুছ মুন্সি (৬৫), নোমানের স্ত্রী মোসা. তাহিরা (১৯), নোমানের শাশুড়ি মোসা. রহিমা (৫৫) ও তার মেয়ে মোসা. তানজিলা (২৮)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে বাবার দোকান বন্ধ করে হাসিব।  এসময়  ১০ হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে হাসিবকে ফুসলিয়ে অপহরণ করেন আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে শিশু ফকির। তাকে পাথরঘাটা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ ইমান আলী সড়কে গোলাম মোস্তফার ভাড়া দেওয়া টিনসেড দোতালা ঘরের মধ্যে নিয়ে যায় নোমান। এরপর দুজনে একসঙ্গে রাতের খাবার খায়। রাত ৯ টার দিকে পাথরঘাটা পৌর বাজারের মাসুদ ফার্মেসি হতে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট এনে সেভেনআপে মিশিয়ে হাসিবকে খাওয়ায় তানভীর। হাসিব কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পরে। ওই দিন রাত ১২টার হাসিব ২ বার বমি করে। পরদিন ২১ অক্টোবর ৭টার দিকে হাসিবকে পুনরায় ৩ টি অ্যালার্জির ট্যাবলেট খাওয়ালে সে আবার ঘুমিয়ে পরে। ওই সময় কিডনি নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাসিবের শরীরের রক্ত নিয়ে তাকে ঘরে আটকে রেখে ওই বাসায় ভাড়ায় থাকা বরগুনার হেউলিবুনিয়ার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক মিজানের কাছে নিয়ে যায়। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে না মিললে হাসিবকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ওঠে। কিন্তু মিজান জানায়, এখন হাসিবকে ছেড়ে দিলে তারা বিপদে পড়বেন। এসময় নোমানকে মিজান বলে, ‘বাঁচতে চাইলে হাসিবকে জীবনে শেষ করে দাও। ’ 

মিজানের কথা অনুযায়ী সকাল ১০ টার দিকে হাসিবের হাত, পা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বেঁধে মুখে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এর আগে হাসিবের সঙ্গে থাকা ফোনে ভিডিও ধারণ করেন নোমান। এরপর হাসিবের চাচা মনিরের ইমোতে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।

ওই মামলায় আর উল্লেখ করা হয়, ওইদিন বিকেলে হাসিবের অসুস্থতার কথা বললে মনির নোমানের বিকাশে ৪ হাজার টাকা পাঠায়। ২২ অক্টোবর সকাল ৭ টার দিকে অটোরিকশা যোগে হোগলাপাশা শ্বশুরবাড়ি নিয়ে মরদেহ লুকিয়ে রাখেন নোমান। এদিন বিকেল চারটার দিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় ইজিবাইকে করে কাকচিড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইনচটকি বেড়িবাঁধ এলাকায় আ. রহিম কাজীর সহায়তায় হাসিবের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখেন নোমান।

এদিকে সোমবার আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ২ জনের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।