ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কনস্টেবল পারভেজের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা

সাজিদুর রহমান রাসেল , ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
কনস্টেবল পারভেজের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা (বাঁ থেকে) বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা ও ছেলে আমিরুল ইসলাম পারভেজ

মানিকগঞ্জ: শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজ। ছেলের অকাল মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা।

 

রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে টাঙ্গাইল জেলা নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।  

জানা গেছে, গত দেড় বছর আগে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন পারভেজের পরিবার। বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লার দুই ছেলে পারভেজ ও আজিজুল হক বিপ্লব এবং বড় মেয়ে সেফালি বেগম। দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন পারভেজ। প্রায় দশ বছর আগে পারিবারিক ভাবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকার রুমা আক্তারের সঙ্গে পারভেজের বিয়ে হয়। ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। নাম রাখা হয় তানহা ইসলাম। বর্তমানে তার বয়স সাত বছর।

পারভেজের বড় বোনের বিয়ে হয় অনেক আগেই, তবে ছোট ভাই বিপ্লব বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ফলে পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল বড় ছেলে পারভেজের ওপর।

কিন্তু পারভেজের মৃত্যুর সংবাদটি শোনার পর থেকেই বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন।  

আমিরুল ইসলাম পারভেজ চলতি বছরের ৩ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন সিটিআই-৩ এ যোগ দেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট। পারভেজ স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০৪৯ সালের ৯ মে।  

পারভেজের বড় বোন সেফালি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আমার ভাই পারভেজ দেশের পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। পুরো পরিবারটি পারভেজ ওপর নির্ভর ছিল। এখন কীভাবে চলবে আমাদের এই পরিবার। আমার ছোট্ট ভাতিজি তানহা অল্প বয়সে এতিম হয়ে গেলো। আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।  

পারভেজের ছোট ভাই আজিজুল হক বিপ্লব বলেন, বড় ভাই (পারভেজ) গত দুই মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন। বাড়ি এসে বলেছিলেন, আল্লাহ বাঁচায় রাখলে ডিসেম্বর মাসে আবার বাড়িতে আসবো। বাড়িতে এসে মায়ের হাতের ইলিশ রান্না খাব। আমার ভাইয়ের সেই মনের আশা আর পূরণ হলো না। যারা আমার ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।  

পারভেজের ভাড়া বাসার প্রতিবেশী জাহানারা বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি এক সময় দৌলতপুরের চরকাটারীতে ছিল, তখনও ওদের বাড়ির পাশেই ছিলাম আমরা। ছোট বেলা থেকেই পারভেজ খুব মিশুক ছিলেন। ছোট-বড় সবার সঙ্গে ছিল তার সুন্দর ব্যবহার। কখনও কারও সঙ্গে কোনো দিন বিবাদ করেননি।  

আরও এক প্রতিবেশী হাফিজা বেগম বলেন, পারভেজ ভাই আমার বয়সে বড় হলেও কোনো সময় আমার সঙ্গে তুমি বলে কথা বলেননি। সব সময় সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। ছুটিতে বাড়িতে এলে সবার খোঁজ-খবর নিতেন তিনি।  

দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নের সবুজ সেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পারভেজ যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই আমি তাকে চিনি, ছেলে হিসেবে লাখে একটা। তার বাবা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন আর ছেলে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হলেন। পারভেজের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানাই।  

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্ল্যা বলেন, আমিরুল ইসলাম পারভেজের মরদেহটি এখনও ঢাকায় আছে বলে শুনেছি। তার মরদেহ এলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সরকারি হাই স্কুল মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।