ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের টানা অবরোধের প্রথম দিন চলছে। এদিন সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে অফিসগামী যাত্রীদের বাস পেতে দেরি হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী বাড়তে থাকে গণপরিবহন। যাত্রী চলাচলও কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। বিকেলে অফিস ফেরত যাত্রীদের তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি।
তবে ঢাকায় অন্যান্য কর্মদিবসে যে তীব্র যানজট থাকে তারও দেখা মেলেনি। রাস্তায় প্রাইভেটকার ছিল একেবারেই সীমিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সারোয়ার বাধন নামে এক ব্যক্তি সকাল ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, সকালে নিউজ দেখলাম যান চলাচল স্বাভাবিক, কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি বাসের টিকিটিও নেই। আশার গুড়ে বালি।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল এবং আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর প্রধান গণপরিবহন বাস চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় একেবারেই কম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী যাত্রীরা। বেশি ভাড়ায় অনেকে চলাচল করেছেন রিকশায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, অন্যান্য দিনে যেখানে রিকশা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। সেখানে ৭০-৮০ টাকা ভাড়ায় চলতে হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহমুদুর রহমান বলেন, সকালে বিকাশ পরিবহনে সায়েন্স ল্যাব থেকে বনানী এসেছি ২০ মিনিটে। গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। তবে হরতালের দিন থেকে আজ একটু বেশি গাড়ি। তবে রাস্তায় কোনো জ্যাম পাইনি। মোহাম্মদপুর- মতিঝিল রুটে গাড়ি দেখলেও অন্যান্য রুটের গাড়ি ছিল কম।
সোমবারই অবরোধের মধ্যেও পরিবহন মালিক সমিতি সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি বা পণ্যবাহী যান চালানোর ঘোষণা দেয়। একই ঘোষণা দিয়েছিল ট্রেন, লঞ্চ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) কর্তৃপক্ষও।
সকাল থেকে বাংলানিউজের প্রতিনিধিরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে যে সংবাদ পাঠিয়েছেন, তাতে দেখা গেছে, যানবাহন চলাচল কম। আন্তঃজেলা বাস চলাচলও খুবই সীমিত।
গাবতলী ও সায়েদাবাদে সরেজমিনে দেখা যায়, দূরপাল্লার গাড়ি তেমন দেখা যাচ্ছে না, সেই সঙ্গে যাত্রীও কম।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক গোলাম সামদানী বলেন, আমি নিজে ফুলবাড়ি বসে আছি। বাস চলছে। তবে যাত্রী নেই। অফিস সময়ে কিছু যাত্রী ছিল। ব্যক্তিগত গাড়িও অনেক কম। তবে হরতালের দিন থেকে আজ গাড়ি বেশি।
অনেক চালক অভিযোগ করেছেন বাস পোড়ানো বা ভাঙচুরের পর ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে থাকায় গাড়ি কম নামছে। এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিবহন মালিক নেতা বলেন, উপর মহলের যারা আছেন, তারা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন।
অবরোধের প্রথম দিনে প্রেস ক্লাবে একটি বাস পোড়ানো এবং পল্টনে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা ছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (১২ ঘণ্টায়) উচ্ছৃঙ্খল জনতার আগুন দেওয়ার সাতটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা সিটিতে একটি, ঢাকা বিভাগে (নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর) চারটি, চট্টগ্রাম বিভাগে একটি, রাজশাহী বিভাগ (বগুড়া) একটি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনটি বাস, একটি পার্সেল কাভার্ড ভ্যান, একটি পিকআপ, দুটি শোরুম, একটি পুলিশ বক্স পুড়ে যায়।
শিডিউল মেনেই কমলাপুর থেকে ঢাকা ছেড়েছে সব ট্রেন। বাংলানিউজকে এমনটি জানিয়েছেন কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার।
দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোও যথাসময়ে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অবরোধের কারণে যাত্রীদের চাপ একটু কম থাকলেও ট্রেনগুলো যথাসময়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কোনো বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কাও নেই।
অন্যদিকে যাত্রীর সংখ্যা বুঝে লঞ্চ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি। মালিক সমিতি জানিয়েছে, লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল যাত্রী কম থাকার কারণে।
এদিকে বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিনে মেট্রোরেল চলাচল ছিল স্বাভাবিক। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) অন্যান্য দিনের মতোই মেট্রোরেল সকাল ৮ থেকে চলাচল শুরু করে।
মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনে দায়িত্বরত এমআরটি পুলিশের এএসআই আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল ও অবরোধে এমআরটি পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়া রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর নেতৃত্বে সংগঠনটির কর্মীরা অবস্থান নেন। স্লোগানে স্লোগানে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীরা জানান দেন, তারা বিএনপির নাশকতা বন্ধে রাস্তায় সক্রিয় আছেন।
রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়, সায়েন্স ল্যাব মোড়, গুলশান, মহাখালী, পল্টন, কুড়িল, কাকরাইলসহ প্রতিটি স্পটে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। রোববার হরতাল শেষে তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, অক্টোম্বর ৩১, ২০২৩
এনবি/আরএইচ