সাতক্ষীরা: ‘আমার এজাহার ওদের পা ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল। বলেছিল তোরা আমারে প্রাণে মারিস নে, আমি তো তোদের কোনো ক্ষতি করিনি, আমার প্রাণটা ভিক্ষা দে।
২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের আমতলা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী এজাহার আলীর মা বয়োবৃদ্ধ শাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই ছেলে এজাহারের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
এসময় চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি আরও বলেন, আর যেন কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়। কেউ যেন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার না হয়। কেউ যেন স্বামী হারা না হয়, কেউ যেন সন্তান হারা না হয়, কেউ যেন পিতৃহারা না হয়।
এজাহার আলীর ছেলে ইসরাইল হোসেন বলেন, আমার আব্বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। উনি অনেক সাহসী ছিলেন। এলাকার মানুষ যেকোনো বিপদে আপদে আব্বার কাছে আসতেন, তাকে সমস্যার কথা বলতেন। জামায়াত নেতা মিজানুর রহমান পিকলু, বিএনপির মুনসুর আলী মোড়ল, কাশেম, আবুল খায়ের, ইয়ারুল, উজ্জ্বল মোড়লদের মধ্যে অনেকেই বিডিআর বিদ্রোহের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা এলাকায় এসে লুটতরাজে অংশ নেয়। বাসাবাটি স্কুলের পাশে নদীর পাড়ে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। সেটা তারা দখল করার চেষ্টা করে। কয়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু করলে তারা সুযোগ নেয়। ২০১৩ সালে ৮ ডিসেম্বর রাতে আমার আব্বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওইদিন রাতে জামায়াতের ইউনিয়ন আমির মিজানুর রহমান পিকলু, বিএনপির মুনসুর আলী মোড়ল, কাশেম, আবুল খায়ের, ইয়ারুল, উজ্জ্বল মোড়লসহ ১২-১৩ জন অস্ত্র নিয়ে আমাদের দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয়। একই সঙ্গে দোকানে ঘুমন্ত আব্বাকে বের করে কুপিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় তারা। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে এসে আব্বাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অবস্থায় পাই। ততক্ষণে এলাকার মানুষ এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করে। তখন এমন অবস্থা আব্বাকে হাসপাতালে নেব, সেই সুযোগও তারা রাখেনি। বল্লীর চারপাশের সড়কগুলোতে তারা গাছ কেটে অবরুদ্ধ করে রাখে। আম্বুলেন্স আসতে পারেনি। তখনও আব্বা বেঁচে ছিলেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় তিনি অনেক কথাই বলে গেছেন। তিনি প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও পাননি। পরদিন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এরপর আমরা অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এখন আমাদের অপেক্ষা ন্যায় বিচারের।
এজাহার আলীর স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, আমাকে যারা বিধবা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ফাঁসি চাই। বিচার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। এখন শুধু রায় ঘোষণার অপেক্ষা। দোয়া করি আর কোনো মানুষ যেন এমন নৃশংসতার বলি না হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
আরএ