বগুড়া: বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার ভার কাঁধে নেওয়া স্কুলছাত্রী জোনাকির পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ ৷
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে তাদের এনজিও ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি তিন মাসের খাবার এবং প্রতি মাসে জোনাকির লেখাপড়ার খরচ নিয়ে জোনাকিদের বাড়িতে হাজির হন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।
দুই বছর আগে ২০২১ সালে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জোনাকির বাবা জিল্লার রহমান।
কারখানা থেকে যে উপার্জন হতো তা দিয়ে চিকিৎসার জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ আর মায়ের ওষুধের একাংশ যোগান দিতে পারলেও খাদ্য সংস্থান করার মতো তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকতো না তাদের। ফলে খেয়ে না-খেয়ে দিন চলছিল মা-মেয়ের। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নজরে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের।
শুক্রবার কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন অর্থ সহায়তা নিয়ে সোনাতলায় জোনাকিদের বাড়িতে হাজির হলে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন মানবিক সহায়তা পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন জোনাকির মা ক্যানসার আক্রান্ত মেনেকা বেগম।
বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে ইমদাদুল হক মিলন জোনাকিকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। পাশাপাশি মা-মেয়ে যেন আগামী তিন মাস কোনো খাদ্য সংকটে না ভোগেন এজন্য চাল, ডাল, চিনি, আটা, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, আলু ও মসলা সামগ্রী তুলে দেন তাদের হাতে।
এসময় সেখানে শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লীটন, বালুয়াহাট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ মণ্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা টিজিএসএসের চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য সাজু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ জোনাকি ও তার মায়ের পাশে থাকবে। যতদিন পর্যন্ত জোনাকি লেখাপড়া করতে চায় ততদিন সে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাবে। এছাড়া ক্যানসার আক্রান্ত মেনেকা বেগমের চিকিৎসার জন্যও সহায়তা দেওয়া হবে।
তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস সহকারী মহিদুল ইসলামের হাতে মেনেকার নামে নেওয়া ঋণের সমুদয় টাকা তুলে দিয়ে ব্যাংক থেকে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র ও জমা বই মেনেকা বেগম ও জোনাকির হাতে তুলে দেন।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু জোনাকি নয়, সারা দেশের এমন অনেক অসহায় মানুষের পাশে আছে। গ্রামীণ অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
বসুন্ধরা শুভসংঘের এমন উপহার পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেনেকা বেগম। তিনি বলেন, ‘এমন দিনে তারা পাশে এসে দাঁড়াইছে, আল্লাহ যেন তাদের ভালো করে। ’
জোনাকি নিজেও আবেগাপ্লুত হয়ে বলে, ‘এখন আর অন্তত কিস্তির ট্যাকার টেনশন থাকলো না। খাবারগুলো ঘরে থাকায় এখন কাজ করার দরকার হবে না। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩
কেইউএ/এইচএ/