যশোর: যশোরের মনিরামপুরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সংলগ্ন হরিহর নদীতে মেশিন বসিয়ে প্রকাশ্যে বালু তোলা হচ্ছে। মনিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল শ্রমিক খাটিয়ে বালু তুলে পৌরসভার মাঠ ভরাট করছেন।
এদিকে, নদী খুঁড়ে বালু তোলায় ক্ষতির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হরিহর নদীর পাড়ের তাহেরপুর এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু কোনো প্রতিকার না হওয়ায় উদ্বিগ্ন তারা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে এমন অনিয়মে হতাশ পরিবারগুলো।
স্থানীয়রা জানান, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসি-ল্যান্ড কার্যালয়ের ঠিক নিচে হরিহর নদীতে বালু তোলার দুইটি যন্ত্র বসানো হয় প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে। তাহেরপুর এলাকার রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বালু তোলার কাজে নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে বালু তোলা শুরু হয়ে বন্ধ হয় ভোরে। দিনের বেলায় সবার চোখের সামনেই নদীতে বালু তোলার যন্ত্র রেখে দেওয়া হয়।
সূত্র বলছে, নদী থেকে পাইপে বালু টেনে এনে প্রথমে প্রভাতী বিদ্যাপীঠের নতুন ভবনের ভেতরে ও মাঠে ভরাট করা হয়েছে। এখন পাকা সড়কের ওপর দিয়ে পাইপ টেনে নদীর বালু দিয়ে পৌরসভার মাঠ ভরাটের কাজ চলমান আছে।
অভিযোগকারীদের একজন শিক্ষক সাজেদা খাতুন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হরিহর নদীর পাড়ে আমার দোতলা বাড়ি। যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে তাতে যে কোনো সময় আমাদের বাড়িঘর ধসে নদীতে পড়ার আশঙ্কা করছি। বালু তোলা বন্ধ করার জন্য আমরা নদীর পশ্চিম পাড়ের পাঁচ-সাতজন বাসিন্দা ইউএনও এবং এসি-ল্যান্ডের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। একদিন রাতে মেশিন চলার সময় আমি এসি-ল্যান্ডকে ফোনকলে জানিয়েছি। তারপরও বালু তোলা বন্ধ হচ্ছে না।
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত তাহেরপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, পৌরসভার মাঠ সমান করাচ্ছেন মেয়র। প্যানেল মেয়র সঙ্গে আছেন। আমরা চারজন শ্রমিক তার কাজ করছি। দুইটি মেশিন দিয়ে তিন দিন পৌরসভার মাঠে ২৫-৩০ ট্রাক বালু তুলেছি। প্রাইমারি স্কুলে ৩০ ট্রাক তোলা হয়েছে। রাতে বেশি সময় বালু তোলা হয়।
জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান বলেন, কারও ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যাবে না। পৌরসভার স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছে। সাংবাদিক হলেও বিষয়টি আপনারা বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, প্রভাতী বিদ্যাপীঠের মাঠে বালু তোলার সময় অনুমতি নিয়ে করেছি। পৌরসভার মাঠের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়নি।
মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, মাটি ফেলে পৌরসভার মাঠ ভরাট করেছি। আগে ওরা স্কুলের মাঠ ভরাট করেছে। সেখান থেকে লাইন টেনে একদিন মাত্র পৌরসভার মাঠে বালু ফেলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রভাতী বিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছেন প্যানেল মেয়র কামরুজ্জামান। কক্ষের ভেতরে ও মাঠ বরাটে সরকারি বরাদ্দ থাকলেও তিনি নদী থেকে বালু তুলে মাঠ ভরাট করেছেন। এরপর কামরুজ্জামান ওই মেশিন দিয়ে হরিহর নদীর একই স্থান থেকে বালু তুলে চার কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরসভার নবনির্মিত তিন তলা নতুন ভবনের সামনের মাঠ ভরাটের কাজ করছেন।
মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম। প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে খোঁজ নিয়ে বালু তোলার বিষয়টি জানতে পেরেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, নদী থেকে বালু তোলার ব্যাপারে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি দেখছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
ইউজি/এইচএ/