যশোর: মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মস্থান কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে বসছে মধুমেলা। অন্য বছরগুলোতে ৬ দিনব্যাপী মধুমেলা চললেও এবছর চলবে ৯ দিনব্যাপী।
তবে প্রতিবছরের মতো এবছরও ক্ষমতাসীন দলের ব্যানারে থেকে সুবিধাবাদী একটি চক্র সরকারি উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়ে ‘মানানসই মূল্যে’ মেলার মাঠ কিনে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রির পাঁয়তারা শুরু করেছেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলামকে অভিযুক্ত করেছেন উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তরিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাছে অভিযোগও করেছেন তিনি।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সরকারিভাবে মধুমেলার উন্মুক্ত ডাকে অংশ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলাম পার্কিং গ্যারেজ ব্যতীত সব কিনেছেন। এখন তিনি তিনগুণ টাকায় বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ দরদাতা খুঁজে গোপনে সাবলিজ দিচ্ছেন। এছাড়াও মধ্যকূলের কামাল হোসেন ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় কেনা পার্কিং গ্যারেজটিও ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে মেলায় সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে দর্শনার্থীদের ওপর চাপ পড়বে, ক্ষুব্ধ হবেন মধুমেলাপ্রেমীরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বছরগুলোতে মধুমেলা ঘিরে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট তৎপর থাকে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তারা ‘দলের ছেলেপিলে’ করবে এমন আখ্যা দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করে থাকেন।
অভিযোগ আছে, এই টাকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিভিন্ন মহল খুশি করতেও ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে। তবে, বাস্তবে দলীয় কোনো নেতাকর্মীরাও সুফল পায় না। তবে, মধ্যসত্ত্বভোগীদের এই প্রতারণার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মধুমেলাপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
তার অন্যতম কারণ, মাঠ হাতবদলের ফলে দর বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যায় সবকিছুর দাম। মেলার মাঠে পৌঁছানোর আগে একটা মোটরসাইকেল রাখতেও নেওয়া হয় কমপক্ষে ১০০ টাকা। যা অনেক বেশি বলেই মনক্ষুণ্ন মেলায় আগতরা। এছাড়াও মেলার প্রতিটি আয়োজনে নেওয়া হয় অতিরিক্ত দাম। অতিরিক্ত টাকায় দোকান বরাদ্দের কারণে খাবারের দোকান ও হোটেলগুলোতেও চড়া দাম নেওয়া হয়। এরপরও খাবারের মান নিশ্চিত করা হয় না। এককথায় স্থানীয় দালালখ্যাত মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কারণে নষ্ট হয় মেলার সামগ্রিক পরিবেশ।
জানা গেছে, অন্য বছরগুলোর থেকে এবছর মধুমেলা তিনদিন বেশি চলবে। ফলে মেলার সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও উন্মুক্ত মধুমঞ্চে দর্শনার্থীদের জন্য নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, অতিথি-শিল্পীদের সম্মানী ও আপ্যায়ন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গতবছরের চেয়ে কিছু টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
তবে, উন্মুক্ত ডাকে উপস্থিত হয়ে দরদাতারা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সরকারিভাবে সর্বনিম্ন দর বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার লোকসান হবে। এতে দর্শনার্থীদের ওপর প্রভাব পড়বে। এসব বিবেচনায় গতবছরের দরকে সর্বনিম্ন ধরে নিয়ে উন্মুক্ত ডাক তোলা হয়। এতে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত সর্বোচ্চ দরদাতা বিবেচিত হয়ে ১৯ লাখ টাকায় শিশু বিনোদন, সার্কাস, ফার্নিচারের স্টল, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ এবং পৌরসভার মধ্যকূল ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় পার্কিং গ্যারেজ কেনেন।
সরকারি নিলামে অন্যতম শর্ত ছিল, কোনো আয়োজন সাবলিজে প্রদান করা যাবে না। অথচ কয়েক দিনের ব্যবধানে মেলার সকল আয়োজন গোপনে সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে সাবলিজ দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারি নিলাম মূল্যের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে দিয়ে কেনা হয় সাইকেল গ্যারেজ। ইতোমধ্যে ৭ লাখ টাকায় সাবলিজ দেওয়া হয়েছে সেটি। এছাড়াও এলাকায় গুঞ্জন আছে, ত্রিমোহিনী ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, হাসানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুর প্রত্যেকে ২ লাখ ৫০ হাজার করে টাকার বিনিময়ে জাদুর প্যান্ডেল নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মেলা ও সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, ‘আমি কেমন মানুষ সেটা জেলাব্যাপী জানেন, এমন কাজ আমি করি না। ইউনিয়নে যেসব ছেলেপেলে আমার রাজনীতি করে তাদেরকে মেলার প্যান্ডেলগুলোর দায়িত্ব দিয়ে বলেছি, কে কোনটা চালাবি চালা, আমি সরকারের কাছ থেকে যা দিয়ে কিনেছি সেই টাকা ফেরত দিবি। ’
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তুহিন হোসেন বলেন, মেলার মাঠ ইজারার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, কোনোকিছু সাবলিজ দেওয়া যাবে না। ফলে এমনকিছু করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগের বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৩
ইউজি/এসএএইচ