ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাবার বাড়িতেই মৃত্যুর দিন গুনছেন অগ্নিদগ্ধ কল্পনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
বাবার বাড়িতেই মৃত্যুর দিন গুনছেন অগ্নিদগ্ধ কল্পনা গৃহবধূ কল্পনা আক্তার

লালমনিরহাট: ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ কল্পনা আক্তার (১৯) আর্থিক সংকটে বাবার বাড়িতে গুনছেন মৃত্যুর দিন। উন্নত চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার দাবি স্বজনদের।

কল্পনা আক্তার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা গ্রামের কৃষি শ্রমিক রুবেল মিয়ার স্ত্রী, একই উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, দেড় বছর আগে কল্পনার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কৃষি শ্রমিক রুবেল মিয়ার। পাঁচ মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা হন গৃহবধূ কল্পনা আক্তার। সন্তান আসার খবরে পুরো পরিবারে আনন্দে ভরে ওঠে। সাধ্যমত স্ত্রীকে সুখেই রাখেন স্বামী রুবেল মিয়া।  

তবে উত্তরের এ হাড়কাঁপানো শীতে প্রিয় স্ত্রীকে গরম কাপড় কিনে দেওয়ার সাধ্য নেই স্বামী রুবেলের। শীত নিবারণের জন্য গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে চুলার পাশে আগুন পোহাতে বসেন অন্তসত্ত্বা কল্পনা আক্তার। এ সময় তার পরনের কাপড়ে আগুন লেগে যায়। এতে তার শরীরের হাঁটুর নিচ থেকে গলা পর্যন্ত পুড়ে যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে কল্পনাকে নিয়ে যায় তার পরিবার। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।  

স্বামী রুবেল সেদিন বিকেলেই স্ত্রী কল্পনাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন শুক্রবার ছুটি থাকায় চিকিৎসক আসেননি। একদিন পর শনিবার চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য কল্পনাকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করতে বলেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কল্পনার পরিবারকে বলেন, তার শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে। লম্বা সময় ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কল্পনার চিকিৎসা করা না গেলে তাকে ও তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।  

চিকিৎসকদের কথায় দিশেহারা কল্পনার পরিবার। চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই কল্পনাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। আর এখন কল্পনা তার বাবার বাড়ির বিছানায় পুড়ে যাওয়া ক্ষতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আর্থিক সংকটে চিকিৎসা ছাড়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন কল্পনা আক্তার।

কল্পনার স্বামী রুবেল বলেন, আমি দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। যে সামান্য জমানো টাকা ছিল, তা রংপুর যাওয়া-আসায় এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। নিকটাত্মীয়দের কাছে ধার চেয়েও পাচ্ছি না। আমার সুখের সংসারে সৃষ্টিকর্তা কেন এমন বিপদ দিল?  কী করব বুঝতে পারছি না। কোথায় পাব এত টাকা? সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য চাই।  

দগ্ধ গৃহবধূ কল্পনা আক্তার বলেন, আমি বাঁচতে চাই, আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখাতে চাই। আমি সমাজের বিত্তশালীদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আকুতি জানাই।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, এ রকম অবস্থায় মা এবং সন্তান দুজনই মৃত্যুঝুঁকিতে। বিশেষায়িত হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তার চিকিৎসা হওয়া দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৪
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।