সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু বলেছেন, আমি যদি নির্বাচনী ওয়াদা ভঙ্গ করি এবং আপনাদের কখনো ভুলে যায় তবে সেই দিন আপনারা আমার গলায় গামছা দিয়ে বেঁধে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবেন।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো নিজ নির্বাচনী এলাকায় ফিরে শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় হয়েছে। আমি এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছি সাতক্ষীরায় কেউ কোনো অন্যায় অবিচার করে ক্ষমা পাবে না। আপনারা জানেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব ধ্বংস করা হয়েছে। সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। ভোমরা স্থলবন্দরে টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি করে ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করা হয়েছে। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতি ধ্বংস করা হয়েছে। পেশাজীবী সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব প্রকৃত সাংবাদিকদের হাতে থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর আধুনিকায়ন, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল পুনরায় চালুকরণ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং সাতক্ষীরা থেকে দুর্নীতি বিতাড়িত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই স্কুল-কলেজে নিয়োগে কেউ অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা-২ আসনে আসাদুজ্জামান বাবুকে মনোনয়ন দিয়েও পরে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে আসাদুজ্জামান বাবু তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টি মিলে আমাকে বিজয়ী করেছে। আমি আপনাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ, চির কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম এবং যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। গত দশ বছরে যে অপশাসন চলেছে সাতক্ষীরা থেকে সেই জঞ্জাল দূর করবো।
অনুষ্ঠানে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন- সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম ও যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আব্দুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান।
এর আগে সাতক্ষীরা-২ আসনের নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশুকে বরণ করতে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মোটরসাইকেলে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কুমিরা বাজারে সমবেত হন। সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিরায় পৌঁছালে ফুল ছিটিয়ে ও ফুলের মালা পরিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা তাকে বরণ করে সাতক্ষীরায় আনেন।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েও শেষ মুহূর্তে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। ১০ বছরে মীর মোস্তাক আহমেদের দখলদারিত্বে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সাতক্ষীরার মানুষ, ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে পেশাজীবী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসহ স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফল মূলত মীর মোস্তাক আহমেদ রবির বিরুদ্ধে গণরোষের চিত্র।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৪
আরএ