ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফোনে ‘বন্ধু কেমন আছিস’ বলেই প্রতারণা করতেন দুর্জয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
ফোনে ‘বন্ধু কেমন আছিস’ বলেই প্রতারণা করতেন দুর্জয়

ঢাকা: সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয়, নিজের কাছে থাকা বিভিন্ন নম্বর থেকে অপরিচিত কোনো নম্বরে কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে কল রিসিভ করলে প্রথমেই কথা বলতে শুরু করেন তিনি।

বলেন, দোস্ত কেমন আছিস-কই তুই? অপ্রস্তুত অপরপ্রন্তের মানুষটি জানতে আগ্রহী হয়, তার কোন বন্ধু ফোন দিল?

দুর্জয় আবার তাকে বলেন, আমাকে চিনলি না, তোর স্কুল বন্ধু, বলতো আমি কে? তোর কোন কোন স্কুল ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ হয়? আবার কখনো কাউকে বলেন, চিনলি না? তোর কোন বন্ধুটি বিদেশ থাকে?

তার এমন অভিমানী কণ্ঠে ‘গলে যান’ ফোনের বিপরীত প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। এরপরই দুর্জয়ের প্রতারণা ফাঁদে পা দেন তিনি।

এভাবেই গত ছয় মাসে আড়াই হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয়। কিন্তু যে অপরাধের শুরু আছে, তার শেষও আছে। ধরা পড়েছেন দুর্জয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টু রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুর কাছে নিজেকে আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয় দিয়ে ফোন করেন দুর্জয়। তাদের নিজের মায়ের মৃত্যুর সংবাদ জানান। জরুরিভিত্তিতে বিকাশে কিছু টাকা পাঠানোর অনুরোধ করেন।

বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে তিন বন্ধু মিলে তাৎক্ষণিক ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন আমির। পরে তারা দুর্জয়ের নম্বরে কল করেন। কিন্তু সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে নম্বর থেকে কল করা হয়েছিল বা যিনি কথা বলেছিলেন তিনি তাদের বন্ধু নন। ভুয়া পরিচয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ লুটেছেন ওই ব্যক্তি। তারপর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে অভিযানে নামে ডিবি। গ্রেপ্তার হন দুর্জয়।

হারুন বলেন, দুর্জয় এর আগেও একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে।

দুর্জয়ের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে তিনি প্রতারণার কাজ করতেন। পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নিতেন।

নীলফামারী জেলায় জ্বীনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত দুর্জয়। অভিযান চলার সময় তিনি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যান। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এই কাজে তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে। আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।

১০ বছরে দুর্জয় কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জানতে চাইলে হারুন বলেন, সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা না গেলেও গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনি প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে প্রায় আড়াই হাজার ব্যক্তিকে ফোন করেছেন। যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, যারা সহানুভূতি দেখিয়ে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন অধিকাংশই প্রতারিত হয়েছেন।

প্রতারণার কাজে চুরির ফোন ব্যবহার করা হতো জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সহযোগী মির্জা গত ৩ জানুয়ারি নীলফামারীর ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনী মিছিল থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে দুর্জয়কে এনে দেন। প্রথমে তিনি ওই ফোনের বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেন। পরে ওই ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা শুরু করতেন। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।