জামালপুর: জামালপুরে যৌতুক না পেয়ে গরম পানি ঢেলে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আল আমিন নামে এক স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শুধু তা-ই নয়, স্ত্রীর শরীর ঝলসানোর পর সাতদিন তাকে আটকে রাখারও অভিযোগ উঠেছে।
ওই গৃহবধূ বর্তমানে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শরীরের ২০ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গৃহবধূর বড় বোন বাদী হয়ে জামালপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় আল আমিনের বাবা আশেক আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পলাতক রয়েছেন প্রধান আসামি আল আমিনসহ চারজন।
এর আগে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শহরের গেটপাড় এলাকার এক ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত আল আমিন শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের মুল্লিকপুর গ্রামের আশেক আলীর ছেলে।
তার স্ত্রী (১৮) জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের বাসিন্দা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম জানান, ১০ মাস আগে পারিবারিকভাবে তার ও আল আমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ পাঁচ লাখ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক দেন তারা। বিয়ের চার-পাঁচ মাস পর থেকে আল আমিন আবার পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। এর জন্য মাঝে মধ্যেই তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন আল আমিন। এর মধ্যে গত তিন মাস আগে বাবার বাড়ি থেকে শহরের গেটপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত থাকতে শুরু করেন ভিকটিম। ভাড়া বাসায় আসার পর থেকে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও শুরু করেন আল আমিন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের পর চা বানানোর জন্য রাখা গরম পানি তার শরীরে ঢেলে দেন আল আমিন। এতে তার পিঠের পেছনের অংশসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। এরপর চিৎকার করলে তার মুখের ভেতর ওড়না গুজে দেন আল আমিন। টানা সাতদিন হাত-পা বেঁধে তাকে বাসা তালাবদ্ধ রেখে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন আল আমিন। আর প্রতিদিন সামান্য ওষুধ শরীরে লাগিয়ে দিতেন। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শহরের শেখের ভিটা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান আল আমিন। সেখানে অপরিচিত একজনের মোবাইল ফোন নিয়ে তার বড় বোনকে কল দেন ভিকটিম।
তিনি আরও জানান, পরে তার বড় বোন গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান আল আমিন। পরে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা করেন মেয়েটির বড় বোন।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, মেয়েটির শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে অনেক দেরিতে আসায় শরীরে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। মেয়েটি এখন শঙ্কামুক্ত ও সুস্থ হওয়ার পথে।
এসব বিষয়ে জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, এ ঘটনায় মেয়েটির বড় বোন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে জামালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সহকারী শিক্ষক আল আমিনসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এক আসামিকে ধরা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তাতে অভিযান চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
এসআই