ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাশরুম চাষে নারী উদ্যোক্তা ইতির সফলতা

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২৪
মাশরুম চাষে নারী উদ্যোক্তা ইতির সফলতা

কুষ্টিয়া: কম বয়সে বিয়ে হওয়ার পরে আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি ইতি আক্তারের। স্বামীর সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।

সংসারে অভাব অনটনে নিজে কিছু করার ইচ্ছে হয় তার। স্বামীর পাশাপাশি কিছু করতে পারলে সংসারে সচ্ছলতা আসতো। কিন্তু কি করবেন? কীভাবে একটু স্বামীকে আর্থিক সাপোর্ট দেওয়া যায় এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে ইতি। পরে স্বামীর সাপোর্ট পেয়ে ইতি খাতুন হয়ে উঠেছেন একজন নারী উদ্যোক্তা। নিজ বাড়িতে পরিত্যক্ত একটি ঘরে মাশরুম চাষ করে এখন স্বাবলম্বী তিনি।

এখন অন্য নারীদেরও দিচ্ছেন এ মাশরুম চাষের পরামর্শ। প্রতিদিন অনেক নারী আসেন এ মাশরুম চাষ সম্পর্কে তার কাছে জানতে।

বলছিলাম ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা দুধধর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা ভাটই গ্রামের ইতি খাতুনের কথা।

প্রতিদিন ইতি খাতুন সংসারের কাজের পাশাপাশি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন এই মাশরুম থেকে। ইতি খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে এবং বাচ্চা হওয়ার পরে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে সংসারে অভাব দেখা দিতো। তারপর মনে হতো যে নিজে কিছু করি। তারপরে বিভিন্ন কাজ করে চেষ্টা করি আর্থিকভাবে সফলতার জন্য। কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছিলাম না। এরপর যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমি মাশরুম চাষের ওপরে প্রশিক্ষণ নেই। তারপর সেখান থেকে বিনামূল্যে ১০০ প্যাকেট মাশরুম এবং আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে একটা ঘরের মধ্যে মাশরুম চাষ শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, আমি ১০০ প্যাকেট মাশরুমের স্পোর (বীজ) নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন আমার এখানে ৫০০ প্যাকেট স্পোর রয়েছে। এছাড়া নিজেই এখন মাশরুমের স্পোর তৈরি করতে পারি। স্পোরও বিক্রি করি। এছাড়া এখান থেকে প্রতিদিন মাশরুম সংগ্রহ করি। যার কারণে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ইনকাম হয় আমার।

ইতি খাতুন বলেন, সারাবছরই মাশরুমের চাষ করা যায়। আর এটা বিক্রির জন্য প্রথমে কষ্ট করতে হলেও এখন আর কোনো সমস্যা হয় না। শুরুতে নিজে রান্না করেও মানুষকে খাওয়া শিখিয়েছি। পরে অনলাইনে মাশরুম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছি। এখন অনেকেই দুর দুরন্ত থেকে মাশরুম কিনতে আগ্রহী হয়ে অর্ডার করেন। প্রতিনিয়ত এলাকার নারীরা আসে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে ও শিখতে। নারীরা ঘরে বসে না থেকে মাশরুম চাষ করলে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা পেতে পারেন।

শৈলকূপা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আবুল হাসনাত বাংলানিউজকে জানান, মাশরুম চাষে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমলা কৃষানি ইতি খাতুনকে প্রদর্শনী দিয়েছিলাম। সেখান থেকে মাশরুম চাষ করে ইতি খাতুন এখন বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই মাশরুম চাষ করছেন। ঐ গ্রাম এখন মাশরুমের গ্রামে পরিণত হয়েছে।

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী ও বেকার যুবকদের আমরা মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। সার ও কীটনাশক মুক্ত উচ্চমূল্য সবজি এটি। আগামীতে এ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।

প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, যশোর অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় আমরা মাশরুম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে ১৮০০ জন তরুণ ও কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার ইতি খাতুন আমাদের একজন সফল উদ্যোক্তা ও নারী মাশরুম চাষি। তার সাফল্য দেখে এখন অনেকেই মাশরুম চাষ করছেন। আমরা এমন নারী ও যুবকেরা যাতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এজন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।