ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্ত সড়কের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয়রা, খুলছে পর্যটনের দ্বার

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
সীমান্ত সড়কের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয়রা, খুলছে পর্যটনের দ্বার

রাঙামাটি: অন্ধকার নগরী পার্বত্য চট্টগ্রামে আলোর মশাল পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৯ সালে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের শুভ সূচনা করা হয়। বর্তমানে নির্মিত এ সীমান্ত সড়ক পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলছে।

শুধু তাই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, নিরাপত্তা জোরদারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদান রাখছে এ সীমান্ত সড়ক।

সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এ কাজের গুণগতমান ঠিক রাখতে এবং যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে সেনাবাহিনীর ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৭, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করছে। তিন পার্বত্য জেলায় ১০৩৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক বিভাগ। যা সড়ক বিভাগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বড় সড়ক হতে যাচ্ছে সীমান্ত সড়ক।

১০৩৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম ধাপে নির্মিত হচ্ছে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক। এরমধ্যে ২২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৪৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে। এ বছরের শেষ দিকে প্রকল্পের প্রথম ধাপের বাকী ৫০ কিলোমিটার সড়ক ইটের সলিং করা রাখা হবে। যা আগামী অর্থ বছরে সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়ে কাজ শেষ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।

এই সীমান্ত সড়কটি বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শুরু হয়ে রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, জুরাইছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়ি এবং খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা হয়ে রামগড় উপজেলা সীমান্তে গিয়ে শেষ হবে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে আরও ১০ বছর সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সীমান্ত সড়কের গাড়ি চালক মো. হান্নান বাংলানিউজকে বলেন, সড়কটি নির্মিত হওয়ায় এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। সাত দিনের পায়ে হাঁটার পথ এখন দুই ঘণ্টার মধ্যে যোগাযোগ করা যাচ্ছে।

সীমান্ত কুটিরের ব্যবস্থাপক অলি মারমা বলেন, সড়কের দুপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক সুন্দর। সড়কের কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলটিতে পর্যটন এলাকা গড়ে উঠবে।

সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল ভুঁইয়া মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এখানে নিরাপত্তাজনিত এবং প্রাকৃতিকজনিত ঝুঁকি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এখানে ধ্বসের ঘটনা ঘটে। এরপরও সেনাবাহিনী এখানে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিভাগের মেজর জেনারেল ইফতেকার আনিস বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক বিভাগ আস্থা রেখেছে। এটি সড়ক বিভাগের মেগা প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী সততার সঙ্গে কাজ করছেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমি উল্লাহ নূরী বলেন, আমাদের সড়ক বিভাগের মূল লক্ষ্য হলো পর্যটন এলাকাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পর্যটকরা এখানে আসবে।

সচিব আরও বলেন, সড়কটি নির্মাণে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। নিরাপত্তাজনিত এবং কাজের গুণগতমান ঠিক রাখতে সেনাবাহিনীকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সড়কটি নির্মিত হয়ে গেলে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার, যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি, মাদক, মানব, অস্ত্র পাচার রোধ, কৃষি পণ্য পরিবহন সুবিধা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশি-বিদেশি পর্যটক বৃদ্ধি, শিল্পকারখানা স্থাপন, আত্মসামাজিক উন্নতিসহ পুরো সীমান্ত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীমান্তে সড়ক নির্মাণ করছে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।