ঢাকা, বুধবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

হোলি আর্টিজান হামলা: ফারাজকে ‘হিরো’ বানাতে মিথ্যাচার করে প্রথম আলো

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৫
হোলি আর্টিজান হামলা: ফারাজকে ‘হিরো’ বানাতে মিথ্যাচার করে প্রথম আলো ফারাজ আইয়াজ হোসেন

ঢাকা: গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেনকে নিয়ে এত দিন অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচার করা হয়েছে। একটি পত্রিকায় ফারাজকে একজন ‘সাহসী তরুণ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এর জন্য পরিকল্পিতভাবে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডকে অপসাংবাদিকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি পত্রিকাটির অপরাধ বিষয়ক বিটের সাবেক সাংবাদিক আহমেদ জায়েফের ‘প্রথম আলোর জঙ্গিবাদ কভারেজ ও আমার অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে এক ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ফেসবুক পোস্টে আহমেদ জায়েফ বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত ফারাজ ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রথম আলোর মালিক লতিফুর রহমানের নাতি। ফারাজকে নিয়ে প্রথম আলো ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয় দেয়া’ একজন ‘সাহসী তরুণ’ হিসেবে সংবাদ, কলাম, মতামত ও স্মৃতিচারণা প্রকাশ করে আসছে। প্রথম আলো প্রচার করে, ‘মুসলিম হওয়ায় জঙ্গিরা ফারাজকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ফারাজ তার বন্ধু অবিন্তা কবির ও তারুশিকে ছেড়ে আসতে চাননি। তাই তিনজনকেই হত্যা করে জঙ্গিরা। ’ এ প্রচারণার মূল সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ২০১৬ সালের ২ জুলাই অর্থাৎ ঘটনার পরদিন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে ফারাজের ভাগনে হিশাম হোসেনকে উদ্ধৃত করা হয়। তবে হিশামের এ বক্তব্যের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ওই নিউজটিতে বাংলাদেশ থেকে তথ্য পাঠানো সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক।

আহমেদ জায়েফ বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এ তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। জঙ্গিরা হোলি আর্টিজানে হামলার পরপরই হত্যাকাণ্ড চালায়, যা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে প্রতিষ্ঠিত। সকাল পর্যন্ত নিহত হওয়াদের কেউই জীবিত ছিলেন না। জিম্মি দশা থেকে পালিয়ে আসা বা ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের সাক্ষাৎকার আমি নিজে নিয়েছি। তাদের কেউই বন্ধুদের ছেড়ে ফারাজের আসতে না চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা দেখেননি। পুলিশের তদন্তেও এমন কিছু উঠে আসেনি। অন্যান্য গণমাধ্যমও তাদের রিপোর্টে এমন কোনো ঘটনার বর্ণনা প্রকাশ করেনি। এমনকি প্রথম আলো নিজেও এ ঘটনা নিয়ে কোনো বিস্তারিত সংবাদ উপস্থাপন করতে পারেনি। পুরো বিষয়টি পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠা করেছে কলাম, মতামত, ফারাজকে নিয়ে স্মৃতিচারণার সংবাদ প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ফারাজকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল তা অসত্য। পরবর্তীতে পত্রিকাটি এ বিষয়ে কোনো সংশোধনও দেয়নি। আর ওই প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে প্রথম আলো দিনের পর দিন যে প্রচারণা চালিয়ে আসছে তা অপসাংবাদিকতা।  হোলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে লেখা বইয়ের লেখক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবু গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বইয়ের রেফারেন্স নিয়ে ভারত ফারাজকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। তবে আমার বইয়ে ফারাজের এ ধরনের কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। জিম্মিদের বয়ান, তদন্তের নথিপত্র, তদন্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্য কিংবা আদালতের কাছে জমা দেওয়া চার্জশিটেও এমন কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ বলেন, ফারাজকে হিরো বানানোর ঘটনাটি প্রথম আলোর অসত্য উপস্থাপন। কারণ এ হামলার সময় যারা সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছেন তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এ ঘটনায় ফারাজের হিরো হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যদি কেউ হিরো হয়েই থাকেন তারা হলেন নিহত সেই ২২ জন ব্যক্তি। ফারাজকে নিয়ে যে সিনেমা বানানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।  

হামলার পরপরই জঙ্গিদের সহযোগী হিসেবে ফারাজকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পাশাপাশি নিহত এক জঙ্গির সঙ্গে ফারাজের বন্ধুত্বপূর্ণ ছবি নিয়েও তোলপাড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৫
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।