ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পহেলা বৈশাখের আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী ‘চড়ক উৎসব’

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
পহেলা বৈশাখের আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী ‘চড়ক উৎসব’

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি পহেলা বৈশাখের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানভেদে কোথাও কোথাও আগেপরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

প্রায় শত বৎসরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে গ্রামীণ মেলা এবং স্থানীয় মানুষের সবান্ধব ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি।

এই গ্রামীণ উৎসবকে ঘিরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোওয়াগাঁও এবং সবুজবাগ ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। চড়ক পূজা ও মেলা শেষ হবে পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) রোববার। ঐতিহ্যবাহী এই চড়ক উৎসব দেখতে শত শত মানুষের ঢল নামে।

জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের দশ-বারো দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারির মধ্যে ত্রিশ-চল্লিশ জনকে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হতে হয়। তারপর গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ কয়দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্ন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন।

আয়োজকদের কাছ থেকে জানা যায়, পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত ছাইয়ের উপর মানুষরুপি কালী সেজে নৃত্য করে। অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন। জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর ওপর শিব শয্যা করেন। শিবের ওপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রূপ ধারণ করে।

কালীকাঁচ শেষ হওয়ার পর সকালে পূজারিরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চূড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাঁধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।

চড়ক পূজার আয়োজকরা জানান, নারী-পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম, ভক্ত মণ্ডলীতে বিশাল দা (বলিছেদ) দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। এ ছাড়াও দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শেকড় শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। বিশেষ করে জিহবা ও গলায় গেঁথে দেওয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের পিঠে লোহার দুটি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা ওপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।

চড়কপূজা উদযাপন কমিটির অনিল দেব জানান, বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দুদিন ও ১ বৈশাখ বসে মেলা। শেষ চৈত্রের গোঁধুলীলগ্নে চড়ক গাছ মাটিতে পুঁতে ঘোরানো হয়। এর আগে ভক্ত ও পূজারিরা চড়ক গাছে ফুল, দুধ ও চিনি দিয়ে পূজা দেয়। প্রতি বছরের মত এবারও চড়কপূজা অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হতে চলেছে।

চড়কপূজা ও মেলা সুষ্ঠভাবে সুসম্পন্ন করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
বিবিবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।