ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্ত্রী, অতঃপর..

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিকের হাতে তুলে দেন স্ত্রী, অতঃপর..

শরীয়তপুর: পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার পালিয়ে গিয়েছিল স্ত্রী। এরপরেও সন্তানদের কথা ভেবে বারবারই স্বামী মোহাম্মদ আলী ওই স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন।

কিন্তু পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের বুদ্ধিতে স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে রাতের আঁধারে পরকীয়া প্রেমিকের কাছে তুলে দেন স্ত্রী মুন্নি বেগম। এরপর একটি পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের রাড়ীকান্দি এলাকায় স্বামীর বাড়িতে বসে এভাবেই মোহাম্মদ আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন স্ত্রী মুন্নি বেগম।  

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবরের পুকুর থেকে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মোহাম্মদ আলী (৪০) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিন মাদবরের ছেলে। পেশায় তিনি একজন সিএনজি চালক।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় মুন্নি বেগমের। তাদের সংসারে দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুন্নি বেগম প্রায়ই তার পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদারের সঙ্গে পালিয়ে চলে যেত। কিছুদিন আগেও মুন্নি বেগম মামুনের সঙ্গে পালিয়ে যান। কিন্তু ছোট সন্তানদের কথা ভেবে মোহাম্মদ আলী তার স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে আনেন। এরপরও পরকীয়া প্রেমিক মামুন চৌকিদার বিভিন্নভাবে মুন্নি বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যান। পরে গত বুধবার রাতে মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ হওয়ার পরদিন পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদ আলীর স্বজনরা জানতে পারে মোহাম্মদ আলী ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। এরপর বাড়িতে এসে মুন্নি বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে পরকীয়া প্রেমিক মামুন ও তার সঙ্গীদের কাছে তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এরপর মুন্নি বেগমকে আটক করে থানা পুলিশ খবর দেয় এলাকাবাসী।

নিহত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী মুন্নি বেগমের বলেন, আমি চলে গিয়েছিলাম। এরপর ঝামেলা করে আমাকে আবারও আনা হয়েছে। এই বাড়িতে আসার পরেও মামুনের সঙ্গে আমার মোবাইলে যোগাযোগ হয়। মামুন আমাকে বলেছিল, মোহাম্মদ আলী আমার (মামুনের) নামে মামলা করেছে। মামলা যদি চলমান থাকে তাহলে মোহাম্মদ আলীর ক্ষতি করব। কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম, মোহাম্মদ আলী মামলা তুলে ফেলবে, ক্ষতি করার দরকার নেই। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি বরং আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেছে, ‘আজ ঘুমের ওষুধ দিয়ে যাব, এই ওষুধ মোহাম্মদ আলীকে খাওয়াতে হবে। নয়তো তোমার মেয়েদের মেরে ফেলব। মামুনের এমন কথায় আমি মোহাম্মদ আলীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছি। এরপর মামুন এসে মোহাম্মদ আলীকে অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে গেছে। মামুন যখন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যায়, তখন তার সঙ্গে আরও দুইজন ছেলে ছিল কিন্তু আমি তাদের চিনি না।  

নিহতের ভাতিজা আসিফ মাদবর বলেন, কাকি দুই তিন বার চলে গিয়েছিল। কাকায় শিশু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বারবার ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু কাকি ভালো হয়নি। গত বুধবার রাতে প্রথমে কাকার কাছ থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে নেন। এরপর কাকাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক মামুনের কাছে তুলে দেন। মামুন আমার কাকাকে মেরে ফেলছে। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

নিহতের বড় বোন আয়েশা বেগম বলেন, বারবার চলে যাওয়া সত্ত্বেও আমার ভাই মুন্নিকে এনেছিল। কিন্তু বুধবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, নিহত মোহাম্মদ আলীর পরিবারে দাম্পত্য কলহ ছিল। বিষয়টি নিয়ে থানায় বেশ কয়েক বার অভিযোগ করা হয়েছিল। মোহাম্মদ আলীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার স্ত্রীকে আটক  করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।