ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতিমালা প্রকাশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতিমালা প্রকাশ

ঢাকা: তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতিমালা বা গাইডলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  

ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায় শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ তাপজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে এই গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়।

রোববার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এ নীতিমালার মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল তাতে জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। তাপপ্রবাহ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তখনই আমরা এই নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। এটি সময় উপযোগী একটি নির্দেশিকা যা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের এই নীতিমালার আলোকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত মানুষের জন্য অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। ২০২১ সালে চালু হওয়া ইউনিসেফের ‘সুস্থ শিশুর জন্য সুস্থ পরিবেশ’ শীর্ষক বৈশ্বিক কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিএইচএসের তৈরি এ জাতীয় নীতিমালা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ শিশুদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।  

ইউনিসেফের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে এবং তাপপ্রবাহ না থাকা সময়ের তুলনায় তাপপ্রবাহের সময়ে এই হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাপপ্রবাহের সময়ে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি অনেক বেশি। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ যত বেশি এবং যত তীব্র হবে ঝুঁকি তত বাড়বে। বাংলাদেশে অপরিণত শিশু জন্মের হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৬.২%) এবং তাপপ্রবাহে এটি আরও বাড়ে।

ইউনিসেফের হিসেবে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট শিশুর ৯৯ শতাংশ বা ৩ কোটি ৫৫ লাখ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। ২০২০ সালে মাত্র ২৬ লাখ শিশু, যা দেশের মোট শিশুর ৫ শতাংশ, এই ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।

ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতি তিন শিশুর একজন বা প্রায় ২ কোটি শিশু প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহ, বন্যা, নদী ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিবেশগত অভিঘাতের মতো বিরূপ আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে শিশুরা।

তাপপ্রবাহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নীতিমালায় বলা হয়েছে- গরমজনিত চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন; গরম জনিত চাপের লক্ষণগুলো সহজেই শনাক্ত করুন; নিজেকে ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন; কারও মধ্যে গুরুতর লক্ষণ দেখা গেলে তাকে অবিলম্বে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান।

এই নির্দেশাবলীর লক্ষ্য হলো- জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো এবং গরমজনিত স্বাস্থ্য উদ্যোগে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা।

বৃহত্তর কমিউনিটি ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যম ও তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনের মাধ্যমে এই নীতিমালা বা গাইডলাইন সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৪
আরকেআর/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।