পাবনা: বিপুল পরিমাণ টাকাসহ র্যাবের হাতে আটক জেলার সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহীনসহ আটক ১১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আটকের ১২ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্প থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. এহতেশামুল হক খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটকের পর আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যে টাকা জব্দ করা হয়েছিল সেটি নির্বাচনী ব্যয়ের সীমার মধ্যেই ছিল। জব্দকৃত টাকা ট্রেজারিতে জমা দেওয়া হবে এবং শাহিনসহ সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাড়া পাওয়ার পর শাহিনুজ্জামান শাহীন বলেন, আমরা নির্বাচনী ব্যয় পরিশোধের জন্য টাকাগুলো আনা হচ্ছিল। এটা কোনো অসৎ উপায়ের জন্য ব্যবহার হচ্ছিল না। সম্পূর্ণ বৈধ টাকা। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার বিজয় ঠেকাতে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আজকের ঘটনার তারই বহিঃপ্রকাশ। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আমার অনুরোধ একটু সত্যতা যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করবেন। আমি ভোটারদের অর্থ দেবার জন্য এই অর্থ তুলিনি। নির্বাচনী বকেয়া পরিষদের জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছিল।
এর আগে সোমবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুজানগরের চর ভবানিপুর মুজিব বাঁধের ওপর থেকে তাদের আটক করে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে মঙ্গলবার (৭ মে) ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে র্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর মো. এহতেশামুল হক খান জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের অংশ হিসেবে টহলরত অবস্থা শাহিনুজ্জামান শাহীনসহ ১১ জনকে আটক করা হয়। এসময় শাহিনের কাছ থেকে ব্যাগভর্তি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। টাকাগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে শাহিনুজ্জামান শাহীন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে তিনি জানিয়েছিল। আটকদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে, তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে শাহিনুজ্জামান শাহীনসহ আটক ১১ জনের মুক্তির দাবিতে সুজানগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার ভোর থেকে মুক্তি দেওয়ার আগ মুহূর্তে পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সুজানগর থানাসহ সুজানগর বাজারের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে মুক্তির খবর সেখানে পৌঁছালে আনন্দে মেতে উঠেন নেতাকর্মীরা।
পরে পাবনা র্যাব ক্যাম্প থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসেন তিনি। পরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী নারী, পুরুষ, যুবক, বৃদ্ধা পরিবারের সদস্যরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয়। এ সময় তিনি সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আগামী কালকের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর রাখতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যেহেতু একটি অপ্রীতিকর ঘটনা হয়ে গেছে সেটি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার কাছে থাকা যে পরিমাণ টাকা ছিল সেটি নির্বাচনের নিয়মের বাহিরে না। তাই তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৮মে পাবনার সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আনারস প্রতীকের শাহীনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল ওহাব মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
এসএম