রাজশাহী: আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাতেই ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে রাসিক।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে রাশিকের আয়োজনে মহানগরীতে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে নগর ভবনের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে মহানগরীর বিভিন্ন রেলক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণ। ফ্লাইওভারসহ মহানগরীতে যখন নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আলোচিত বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ব্যাখ্যাসহ মহানগরীর চলমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি।
মেয়র লিটন বলেন, রাজশাহীতে রেলের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শিগগিরই ট্রেন চলাচলের জন্য ডাবল লাইন হতে যাচ্ছে। চালু হতে যাচ্ছে ডাবল ডেকার ট্রেন। কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন নির্মিতব্য ইয়ার্ডে ভারত ও নেপাল থেকে আনিত পণ্য সামগ্রী নামানো ও ওঠানো হবে। আরডিএ-এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি এলাকা উত্তর দিকে বাড়বে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে চলাচল বাড়বে। রাজশাহী সিটির আয়তন তিন থেকে চারগুণ বাড়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। শহরের মধ্যে রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আগামীতে মানুষ ও যানবাহন সংখ্যাধিক্যের কারণে শহরের উত্তর-দক্ষিণে চলাচল ক্রমবৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে যানজটসহ দুর্ঘটনাও বাড়বে। সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের বাস্তবতায় রাজশাহী মহানগরীতে রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান মুহূর্তে ফ্লাইওভার তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে তা করা কঠিন হবে, নির্মাণ ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাই আপাত দৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের ব্যবহার সীমিত মনে হলেও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এর আগে ১৯৬৬-৬৮ সালে রাজশাহী গ্রেটার রোড নির্মাণকালে এই সড়কের নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে কথা উঠেছিল। তবে বিগত ২০-৩০ বছর থেকে আমরা দেখছি, এই গ্রেটার রোড নির্মাণ কতটা প্রয়োজনীয় ছিল।
তিনি জানান, ৫ বছর স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি। নদী ও বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সিটি করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারণ। রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) শুরু করা। মহানগরীর কুমারপাড়া গুলগোফুর পেট্রোল পাম্প হতে সাহেব বাজার বড় মসজিদ, বড়কুঠি, পাঠানপাড়া, শিমুলতলা ক্লাব হয়ে ফায়ার-ব্রিগেড মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর চকপাড়া এলাকায় স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সড়ক বাতিতে আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প। রিজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটরিয়্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট।
এছাড়া আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপন, রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন ও বাস চলাচল চালু করা, বঙ্গবন্ধু রিভার সিটির কার্যক্রম শুরু করার কথা জানান মেয়র।
আর দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ১৫০ শয্যা রাজশাহী সিটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীর সম্প্রসারিত এলাকায় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীর ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্ম নিবাস নির্মাণ কাজ প্রকল্প, রাজশাহী মহানগরীতে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প ও রাজশাহী মহানগরীর ফ্লাইওভার-ওভারপাস-আন্ডার পাস নির্মাণ প্রকল্পের কথাও বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, প্যানেল মেয়র-১ ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
এসএস/এসআইএস