ঢাকা: কিশোরটি এতটাই রোগাক্রান্ত যে শরীরের হাড় গুলো ভাসতে দেখা যায়। কথাবার্তা তো দূরের কথা কোনো সাড়াশব্দও করতে পারে না।
বর্তমানে অপর এক ভবঘুরের সরাসরি সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চত্বর থেকে নতুন ভবনে দিকে যাওয়ার পথে কালভার্টের পাশে পুরাতন ভবনের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বাইরের জানালার খালি জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে সে।
শনিবার (১১ মে) বিকালের দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরের ওই স্থানে আলী নামের অপর এক ভবঘুরে আনুমানিক ১৬ বছর বয়সের ওই কিশোরকে গোসলের পর তাকে কাপড় চোপড় পরিয়ে দিতে দেখা যায়।
মো. আলী জানান, এই কিশোর রোগাক্রান্ত। কথা বলতে না পারায় সেই তার দেখভাল করে যাচ্ছে সে। আলী বলেন, মনে হয় ছেলেটির বাবা-মা অথবা পরিবারের কেউ নেই, আমারও বাবা-মা পরিবারের কেউ নেই, তাই দুজন একসঙ্গেই থাকি তাকে আমি দেখাশোনা করি।
গত মাস দুই আগে রাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে এই কিশোরটি ভেজা অবস্থায় হাসপাতালের পাশের সড়ক থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চত্বরের এই জায়গায় চলে আসে। তারপর থেকে তারা দুজনই সেখানেই অবস্থান করে। আলী বলেন, হাসপাতালে চলার পথে ও আশেপাশে লোকজন যে যা দিয়ে থাকে সেই টাকা দিয়ে ছেলেটির ওষুধ কেনার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া করিয়ে থাকি।
কিশোর বয়সি সেই ছেলেটির শরীরের কয়েকটি জায়গায় ক্ষত দেখা গেছে। তাকে গোসল করানো, সংগ্রহ করা জামা কাপড় পরিয়ে দেওয়া, খাওয়া-দাওয়াসহ সব কাজ করেন আলী। এছাড়া লোক মারফত আলী শুনেছে, অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট খাওয়ালে ওই কিশোর ছেলেটির শরীরের ঘা শুকিয়ে যাবে। তাই তাকে আলী খাওয়া-দাওয়ার পরে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেটও কিনে খাওয়াচ্ছেন।
আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তাকে কেন ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে, এর উত্তরে আলী ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, এই ছেলেটি কথা বলতে পারে না। তাছাড়া হাড় ছাড়া শরীরের মাংস বলতে কিছু নেই। চিকিৎসা তো দূরের কথা তাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসার স্থানে ঢুকতেই দেবে না তাকে। পাশাপাশি এই ছেলেটির শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
হাসপাতালে ওই স্থানে চলাচলকারী অনেকেই বলতে থাকে, এই রোগাক্রান্ত কিশোরকে আলী ভালোভাবেই দেখভাল করছে। গোসল করিয়ে দিচ্ছে। জামা কাপড় পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তার মলমূত্র পরিষ্কার করে দেয়।
আলীর সঙ্গে কথা বলার সময় সেই জায়গায় জড়ো হওয়া মানুষজন বলেন, আলী রোগাক্রান্ত কিশোরটিকে দেখিয়ে মানুষজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে থাকলেও তা কিশোরটির পেছনেই খরচ করছে সে। উপস্থিত অনেকেই বলেন, বাবা মা আপনজন নেই বলে হাসপাতালে থেকেও সে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিশোরটি।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাঝে মাঝে হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকজন ভবঘুরেকে অবস্থান করতে দেখা যায়। এমনও দেখা গেছে হাসপাতাল চত্বর থেকে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া ভবঘুরের লাশও উদ্ধার করা হয়েছে।
যেসব ভবঘুরে হাসপাতালে চত্বরে অবস্থান করে তারা সাধারণত মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। একপর্যায়ে তারা চলাফেরা করতে পারে না শরীর থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বের হয়। হাসপাতালে চত্বরে থাকা এরকম লোকজনের চিকিৎসার দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ১১ মে ২০২৪
এজেডএস/এমএম