ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রিমাল 

‘সন্ধ্যার পর খাটের সমান পানি, রাইতে ঘুমামু কীভাবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
‘সন্ধ্যার পর খাটের সমান পানি, রাইতে ঘুমামু কীভাবে’

বরিশাল: ‘সিডর, আইলাতেও একটানা এত ঝড় বৃষ্টি দেহিনাই। সিডরের রাতটাই ছিল ভয়াল কিন্তু এবারে রিমাল তো রাইত শ্যাষ কইর‍্যা দিনের বেলাও কম ভয় দেহাইলো না।

 আবার এহন আরেক রাইতের ৯ টা পার হইলো, হ্যার পরও বৃষ্টি আর বাতাস বন্ধ হইতাছে না। ’

সোমবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বাংলানিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে এসব কথা বলছিলেন, বরিশাল নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বয়োজেষ্ঠ ফাতেহা বেগম। তিনি বলেন, ‘একটানা এরহম বৃষ্টি অনেক হইছে কিন্তু প্রচণ্ড বাতাসের লগে বইন্যা আর দেহি নাই। সারাদিন বাতাস কি ধাবরণা না ধাবরাইলো, গাছপালা ভাইঙ্গাচুইড়া গ্যাছে। আর এহনও তো থামার কোন লক্ষণ নাই। ’

তার মতো একই কথা জানালেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাপের লগে এই শহরে আইছি আর কয়েকটা যুগও পার কইরা দিছি। এবারের ঝড়ের কারণে এত পানি হইছে যে রাস্তাঘাট তো তলাইছেই, ঘরবাড়ির ভেতরেও পানি ঢোকছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমি যে এলাকায় থাহি, হ্যাহানে কোন সময় পানি জমতে দেহিনাই গত ২০ বছরে, কিন্তু এবার হ্যাইজায়গার রাস্তাঘাট সব পানিতে তলাইন্না, আর মোর ঘরের মধ্যেও পানি।  দুপুরে যাও ফ্লোর ডুবাইন্না ছিল কিন্তু সন্ধ্যার পর খাটের চালনা সমান পানি হইছে।  দুপুরে কোন রহম খাইছি, এহন রানমু কীভাবে আর রাইতে ঘুমামুও বা কীভাবে। ’

এ এলাকার বাসিন্দা ফারুক বলেন, এবারে যে বৃষ্টি হইছে তাতেও এত পানি হওয়ার কথা না। তবে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নগরের ভেতরের খালগুলোতেও প্রচুরে পানি রয়েছে। দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি আর নদীর জোয়ারের পানি মিলে লোকালয়ে ঢুকে সব তলিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর যেন তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, পানির সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মাছ ও সাপের দেখাও মিলছে। অনেকে তো বিকেল থেকে জাল, ট্যাডা, কোচ নিয়ে মাছ শিকারে নেমে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদী, চাঁদমারি খাল ও নাপ্তার খালের পানিতে ব্যপ্টিস্ট মিশন রোড, মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস, ওসমান খান সড়ক, জুমির খান সড়ক, ধানগবেষণা রোডসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। আর সে সব জায়গা থেকে অনেকেই তেলাপিয়া, কৈ, শৌল মাছ পেয়েছেন। এমনই একজন দিনমজুর মিরাজ। তিনি বলেন, আবহাওয়া খারাপ তাই কাজে যাইনি, সারাদিন বিদ্যুৎ ছিল না তারপরও ঘরে বসেই ছিলাম। বিকেলে রাস্তার পানিতে মাছ ছুটতে দেখে কোচ দিয়ে মাছ শিকারে নামি। বেশ কিছু তেলাপিয়া মাছ পাইছি।  কিন্তু রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বিদ্যুৎ আসায় এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত সোয়া ৮ টার দিকে প্রথমে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যুৎ আসে। এরপর থেকে পর্যায়ক্রম নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ আসে। তবে নগরের বাইরে উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ স্থানে এখনও বিদ্যুৎ আসনি। যদিও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।