খুলনা: ‘ঝড়ে আমাগে সব কিছু তছনছ হয়ে গেছে। এ বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আমরা কোথায় থাকবো।
খুলনার বটিয়াঘাটার কাজীবাছা নদীর পাড়ের ডেউয়াতলা গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান চালক আমজাদ গাজীর স্ত্রী সখিনা বেগম বাংলানিউজের কাছে ঘূর্ণিঝড় রিমালে তাদের ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা দেন এভাবে।
হতাশার সুরে সখিনা বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। আমাগে দেখার কেউ নেই। আমরা কোনো সাহায্য পাইনি’।
আমজাদ গাজী বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন। নদীর পাড়ে সরকারি জায়গায় ঘর বেঁধে থাকি। ভয়ংকর ঝড় আমাগে বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। জোয়ারের পানিতে ঘরের পোতাটাও নেই। আমি এ ঝড়ের দিনে বাড়ি ছিলাম, থাহার পরে দেহা যাচ্ছে নদীতে তুফান আইসে, পানির ভয়ে ছিলাম। আমি এ জায়গা থেকে কোথাও যাইনি। কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাইনি এহন বর্তমানে এ পরিবেশে ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। এখন রোজগার নেই বললেই চলে। ওদের মুখে কি খেতে দিবো আর কীভাবেই ঘর তুলবো তাই ভাবি সারা দিন। দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম। এখন না খেয়ে মরার অবস্থা’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রিমালের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কাজীবাছা নদীতে ভেসে গেছে সখিনার ঘরের অধিকাংশ জিনিসপত্র। ঘরের মধ্যে এখনো জোয়ারের পানি আসা-যাওয়া করে। সামনের দিনগুলোতে কি করবেন, কি খাবেন, সন্তানদের নিয়ে কীভাবে দিনাতিপাত করবেন-সেই চিন্তায় রয়েছেন সখিনা ও তার স্বামী। চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি খেয়ে না-খেয়ে চার সন্তান নিয়ে দিন কাটছে নদীর পাড়ে বসবাসকারী এ পরিবারের। অভুক্ত অবস্থায় খাবারের জন্য বাচ্চারা কাঁদছে। এ কান্না সইতে না পেরে বাবা মাও সট ফট করছেন।
ঘূর্ণিঝড় কবলিত ডেউয়াতলা এলাকায় বসবাসকারী আরও প্রায় ১৫-২০টি পরিবারের এ রকম একই চিত্র। এলাকায় শিশু-বৃদ্ধ ও নারীদের অবস্থা আরও করুণ। আর যাদের বসতঘর চাল ঝড়ের তোড়ে ভেঙে গেছে তারা অসহায়ভাবে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটু আশ্রয়ের আশায়। খাবারের সঙ্গে সুপেয় পানির সংকট রয়েছে এ এলাকায়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরে আমি নিজে ডেউয়াতলা এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছি। এরপরও যদি কোনো পরিবার বাকি থাকে তাদের ত্রাণ দিতে চেয়ারম্যানকে বলে রাখা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২৪
এমআরএম/আরআইএস