নাটোর: প্রেমের টানে সুদূর চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন লি সি জাং নামের এক যুবক। নাটোরের মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে মুসলিম রীতিতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম বিধান মোতাবেক ৭ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের ফাতেমার বাড়িতেই এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে ফাতেমার বাড়িতে আসেন লি সি জাং।
আজ রোববার (২৩ জুন) আদালতে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হবে বলে জানা গেছে।
চীন ও বাংলাদেশের ছেলে-মেয়ের বিয়ের ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিন্ন দেশ ও ভিন্ন ধর্মের এ যুগলের ৬ মাসের প্রেম অবশেষে পূর্ণতা পেয়েছে।
ফাতেমা খাতুন সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী।
আর লি সি জাং চীনের সাংসাই এলাকার বাসিন্দা। নিজেকে একজন প্লাস্টিক সার্জন বলে দাবি করেছেন তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এসে প্লাস্টিক সার্জারির কাজও করেছেন বলে দাবি তার। এখন তার নতুন নাম আলী।
জানা যায়, গত ৬ মাস আগে উই চ্যাটের মাধ্যমে ফাতেমার সঙ্গে লি সি জাংয়ের পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে তা গড়ায় প্রেমের সম্পর্কে। অবশেষে প্রেমের টানে চীন থেকে এসে প্রেমিকা ফাতেমাকে বিয়ে করেছেন লি সি জাং। ভালোবাসার এমন নজির স্থাপন করায় নব দম্পতি ও তাদের পরিবার বেশ খুশি।
মেয়ের পরিবার জানায়, বাংলাদেশি তরুণীর ভালোবাসা পেতে নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছেন চীনা যুবক লি সি জাং এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মুসলিম হয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করেছেন ওই চীনা যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি ছিল।
ফাতেমা জানান, তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন লি সি জাং। সেই ভালোবাসার টানে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
তিনি বলেন, প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলার পর চায়না ভাষা রপ্ত করেছি। আমরা সুখে-দুঃখে একসঙ্গে থাকতে চাই।
স্বামীর সঙ্গে চীনে চলে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন ফাতেমা।
লি সি জাং জানান, বিয়ের মাধ্যমে ফাতেমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি তার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখন তার নাম আলী।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের ভালোবাসার কথা সবাই জানুক। সবার কাছে দোয়া চাই।
ফতেমা খাতুনের বাবা আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, বিদেশি ছেলেকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করায় স্থানীয়ভাবে বিয়ের প্রস্তাব এলেও মেয়ে ফাতেমা রাজি হয়নি। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করতে চেয়েছে বলেই গত বৃহস্পতিবার ধর্মীয় বিধান মোতাবেক তাদের বিয়ে পড়ানো হয়েছে। রোববার আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পর্কের পর তাদের বিয়ে হয়েছে শুনেছি। মেয়েটি শিক্ষিত, আগে থেকেই ভাষা শিখত। বিদেশ থেকে ছেলে বা মেয়েরা এসে বাংলাদেশে বিয়ে করছে এ ঘটনা বিভিন্ন এলাকায় ঘটলেও আমাদের এলাকায় প্রথম ঘটেছে। এনিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন গ্রাম থেকে এই যুগলকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন তাদের বাড়িতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৪
এসএএইচ