ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

আইসিইউয়ের অর্থ লোপাটের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

অতিথি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২৪
আইসিইউয়ের অর্থ লোপাটের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে

সাভার (ঢাকা): সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’র নামে অনুদানের ৫০ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।  

‘গণস্বাস্থ্যে মেয়ের স্মরণে দেওয়া আইসিইউ কেবল নামেই, অনুদানের ৫০ লাখ কোথায়’ শিরোনামে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে অনুদানদাতা অধ্যাপক নাসরিন বেগমের।

সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে ও একইদিন বিকেল ৩টার দিকে দুদকে অভিযোগ দেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের এই সাবেক চেয়ারম্যান।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারিতে জার্মানিতে প্রাণ হারান দেশের মেধাবী সন্তান সাবরিনা কামাল তন্বী। মেয়ের আত্মার শান্তিতে জনসাধারণের উপকারের লক্ষ্যে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি আইসিইউ স্থাপনে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রয়াত সাবরিনার মা অধ্যাপক নাসরিন বেগম।

তবে অনুদান গ্রহণের পর আইসিইউ উদ্বোধন করা হলেও হাসপাতালে কোনো আইসিইউসেবা চালু হয়নি।  

বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে অভিযোগের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করে অনুদানদাতা নাসরিন বেগম বলেন, আমার মেয়ে সাবরিনা কামাল তন্বী উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে গিয়েছিল। সেখানে ২০২০ সালের ১৯ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সে। মেয়ের চিকিৎসার অবশিষ্ট টাকা গরিব মানুষের চিকিৎসায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিই, যাতে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পায়। এই লক্ষ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করি। কর্তৃপক্ষ জানায়, সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো আইসিইউ নাই, সেখানে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করলে গরিব মানুষ চিকিৎসা পাবে। পরে ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে দুটি চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা আইসিইউ নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদান করি। তৎকালীন সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক ডা. মঞ্জুর কাদির ওই ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’ স্থাপনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরে একই বছরের ২৯ অক্টোবর তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাবরিনা কামাল তন্বীর নামে সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে একটি আইসিইউ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু সেই আইসিইউ-তে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকে সেবা দেওয়া হয়নি।  

অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, অধ্যাপক নাসরিন বেগম আইসিইউ স্থাপন ও কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ফোন করে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ডা. মনজুর কাদির আহমেদ সময়ক্ষেপণ ও টালবাহানা শুরু করেন। প্রায় ৬ মাস পরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আইসিইউ সম্পর্কে জানতে চান তিনি। তখন তিনি এক মাসের মধ্যে আইসিইউ স্থাপন ও উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের জন্য মুহিব উল্লাহ খোন্দকারকে নির্দেশনা দেন। এর পরই  নাসরিন বেগমকে ফোন করেন ডা. মঞ্জুর কাদির। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে আইসিইউ নিয়ে বিচার দিলেন কেন - তা রূঢ় ভাষায় জানতে চান। উত্তরে তখন তিনি বলেন - ‘আপনি জাফরুল্লাহ ভাইকে জিজ্ঞেস করেন’। তার ২ মাস পর ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’ আইসিইউ উদ্বোধন হয়। তবে এখনও আলোর মুখ দেখেনি সাবরিনা কামাল তন্বী আইসিইউ কেন্দ্রটি।

অনুদানের চুক্তিনামা

নাসরিন বেগম বাংলানিউজকে বলেন, উদ্‌বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহকে দেখিনি। তিনি ছাড়া দেশের বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ডা. জাফরুল্লাহর অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে মুহিব উল্লাহ উনার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছিলেন। যদিও ওই দিন রাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে ডা. জাফরুল্লাহকে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। মূলত দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ডা. জাফরুল্লাহকে উপস্থিত রাখেননি তারা।  

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আইসিইউ স্থাপনে অতিরিক্ত যে অর্থ প্রয়োজন হবে তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রদান করার কথা চুক্তিনামায় উল্লেখ ছিল। কিন্তু তারা কোনো ধরনের অর্থ খরচ না করে উল্টো ডায়ালাইসিস সেন্টারের বেড ও  ঢাকা নগর হাসপাতাল আইসিইউ থেকে ৩টি কার্ডিয়াক মনিটর এনে আইসিইউ-এর নাটক করেন।  

নাসরিন বেগম আরও বলেন, বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে আমি জানতে পারি আমার অনুদানের আইসিইউ-তে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীকেই সেবা দেওয়া হয়নি। সেখানে কেমিক্যালের জারের স্তূপ দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে। যেসব টাকা আমি দান করেছি সেগুলো আমার শ্রম ও কষ্টার্জিত টাকা। সেই টাকাগুলো আমি গরিবদের চিকিৎসার জন্য দান করেছিলাম। যেন আমার মেয়ের আত্মার শান্তি হয়। কিন্তু কয়েকজন মিলে টাকাগুলো লোপাট করেছে। তারা আমার আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। তাদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত। তাদের শাস্তির জন্যই আমি প্রধানমন্ত্রীসহ দুদক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।