ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংঘাতে আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করব: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
সংঘাতে আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করব: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: এইচপিএমও

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহতদের চিকিৎসায় যা যা প্রয়োজন সব করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রাণঘাতি সংঘাতে জড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা বাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক এ সহিংসতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আহত হন।

আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয় সেটাও আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।

সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।

তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ, আমি তো আমার সব হারিয়েছি, বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি, আমি তো জানি মানুষ হারানোর বেদনা কী? আমার চেয়ে বোধ হয় আর কেউ বেশি জানে না।

জামায়াত-শিবির, বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জামায়াত-শিবির, বিএনপি, ছাত্রদল তারাই এ সুযোগটা নিয়ে, কোটা আন্দোলনের সুযোগটা নিয়ে সারা দেশব্যাপী এ ধ্বংসাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই, দেশের প্রতি কোনো মায়া-মমতা নেই, দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আর মানুষকে এরা মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না।

তিনি আরও বলেন, আমার প্রশ্ন এতে অর্জনটা কী হলো। কতগুলো মানুষের জীবন চলে গেল। কতগুলো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

সহিংসতা জড়িতদের খুঁজে বের করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আবারও দেশবাসীকে বলব, যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করা। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনও চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।  

শেখ হাসিনা  বলেন, সেই ৭১ সালের কথা মনে পড়ে, ২০১৩ তে ৩ হাজার ৮০০ মানুষ, মানুষকে পোড়ানো, মেরে ফেলা, আবার ২০১৪ তে সেই একই। ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর পুলিশকে যেভাবে মেরেছে, এবারও সেই পুলিশকে মারা না শুধু, মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা। আওয়ামী লীগের (কর্মী) গাজীপুরের, তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা। একি বর্বরতা, একি জঘন্য। কোনো মনুষ্যত্ব বোধ নেই।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করব এ যে বর্বরতা, এ যে সন্ত্রাস জঙ্গি এবং মানুষকে হত্যা, এটাতো সম্পূর্ণ জঙ্গি কাজ। মানুষের হাত কাটা, পা কাটা, রগ কাটা, চট্টগ্রামে আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেদের ছয়তলা থেকে ফেলে দেওয়া, তাদের রগ কেটে দেওয়া। পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের ওপর হামলা। এটা কোন ধরনের বর্বরতা!

বর্বরতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  দেশবাসীর কাছে এইটুকু বলবো যে যারা অপরাধী তাদের খুঁজে করে দিতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এ বর্বরতার বিরুদ্ধে, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। আমি সব দিকে ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সেবা করার যা যা সবই নষ্ট করবে, সবই ধ্বংস করে দিবে, সবই পোড়াবে।

তিনি আরও বলেন, কতবার আমাকে মারার চেষ্টা করেছে। তারপরও আমি সবকিছু ভুলে, সেই শোক, ব্যথা, বেদনা, বাবা-মা, ভাই সব হারানোর বেদনা, নিজের ওপর এত বড় আঘাত, সবকিছু মোকাবিলা করে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ যেন ভালো থাকে। কিন্তু সেই খানে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং তারপর মানুষগুলোর ওপর হামলা করা। মানুষের সেবা করার প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হয় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ যে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। আর হাসপাতালে আক্রমণ, কোভিড হাসপাতাল ছিল সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকিৎসা যেখানে মানুষের সেবা সেখানে আঘাত হানা, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হয় না।

সরকার কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপর আবার কেন। সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কী জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য?

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে বলবো আপনারা দোয়া করেন। যেন এ জঙ্গিবাদ এবং জুলুমের হাত থেকে মানুষ যেন মুক্তি পায়। মানুষের জীবনে শান্তি আসে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের খোঁজ-খবর নেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৪
এমইউএম/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।