ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কঠোর অবস্থানে সরকার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কঠোর অবস্থানে সরকার

ঢাকা: রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেই দেশের চলমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। আর এর জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েই সরকার অগ্রসর হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতির নির্ধারণী পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আর কোনো সুযোগ নেই বলে তারা মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার ৩ আগস্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাদেরকে গণভবনে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। এরপরই বিকেলে আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়ে রোববার ৫ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন।  

পাশাপাশি সাত আগস্ট মঙ্গলবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঢাকার ডাক দেন। রোববার এই ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে সোমবার ৫ আগস্ট নিয়ে আসে বৈষম্য রোববার (৪ আগস্ট) সারা দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ৯০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।  

থানায় হামলা, মন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে, অফিসে, সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটছে। বিএনপি নেতাদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। সরকার-আওয়ামী লীগ এবং আন্দোলনকারীরা এখন মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে।

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই আন্দোলন এখন আর ছাত্রদের আন্দোলন নেই। এটা অনেক আগেই স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে তারা মনে করছেন। এই আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত প্রবেশ করে তারা এখন নিয়ন্ত্রণ করছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন একটা সমাধানের পথ বের করার জন্য। কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব উপেক্ষা করে এক দফাতে চলে গেছে যেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন। এর সঙ্গে কোটা আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রোববার থেকে জঙ্গি হামলা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও আওয়ামী লীগকে কঠোর অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন দেশব্যাপী সহিংসতায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে। রোববার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় মোবাইলে এসএমএস দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  

গভট ইনফো (Govt info) থেকে পাঠানো এসএমএসে বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবক সকলকে নিরাপদে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সরকারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির উদ্ধৃত করে এতে আরও বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি হামলা হচ্ছে। জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধোয়া এবং মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সরকার উৎখাতের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধ করা হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে জঙ্গি হামলা প্রতিহত করতে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলের সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের পাড়ায়-মহল্লায় কঠিন প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সব হত্যা, সহিংসতার দায় আন্দোলনকারী নেতৃত্বকেই নিতে হবে। আমরা সংঘাত চাই না, শান্তি চাই দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করবেন না, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করবেন না। আন্দোলনের নামে যারা সহিংসতা করেছে, তারা শিক্ষার্থী নয়, বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্র শিবির ও জঙ্গিগোষ্ঠীর ক্যাডার বাহিনী৷ আমরা ধৈর্যের শেষ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। ধৈর্য, সহনশীলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা দেশবাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অশুভ শক্তি কোটা আন্দোলনকে সরকার পতন আন্দোলনে নিয়ে গেছে। এখন আর কোটা আন্দোলন নেই। ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সহনশীল থেকেই সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি মনে করি সরকারের যে কাঠামো আছে সে কাঠামো অনেক শক্তিশালী। দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এদিকে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত ১৯ জুলাই রাত থেকে সারা দেশের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল করে দেওয়া হয়। রোববার সকাল ছয়টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত কারফিউল শিথিল ছিল। কিন্তু রোববার যে পরিস্থিতি তৈরি হয় সেই প্রেক্ষাপটে বিকেল এদিন ছয়টা থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সহিংসতা নাশকতা কঠোরভাবে কঠোর ভাবে দমন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন যারা নাশকতা করছে তারা কেউই ছাত্র নয়। তারা সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্যতম নেতা ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কাছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোটা আন্দোলন আর জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলা এক নয়। কোটা আন্দোলন আর সরকার উৎখাত আন্দোলন এক নয়। কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে সহমর্মিতা সহানুভূতি সমবেদনা সহনশীলতার সঙ্গে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু জঙ্গি হামলা, সরকার উৎখাতের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে। এর সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনকারীদের জড়িত হওয়া যাবে না। ছাত্ররা জড়িত হলে সরকার কোনো দায়িত্ব নেবে না, সরকার দায়ী থাকবে না। জঙ্গি হামলা, সরকার উৎখাত আন্দোলনে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি ‌।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৪
এসকে/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।