চাঁদপুর: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট কুমিল্লা মোগলটুলী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন চাঁদপুরের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ (৬০)। তিনি হাসপাতালে ১০দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বাদ আছর নামাজে জানাজা শেষে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজীরগাঁও গ্রামে বড়বাড়ির নিজ পারিবারিক গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনকে দেখানোর জন্য তার লাশ বাড়ির আঙিনায় নেওয়া হয়। সেসময় সবার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এ সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুসহ কুমিল্লার আইনজীবী, বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তাদের সান্ত্বনা দেন।
এ সময় নিহত আবুল কালাম আজাদের বড় মেয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে জাপানিজ স্টাডিজ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর শেষ করা নিশাত তাসনিম মম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, যারা আমাদের এতিম করেছে আমরা তাদের ফাঁসি চাই, আর কিছু চাই না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আমার বাবা আমাদের বলে গেছেন তাকে কে গুলি করেছে।
বাবা আমাকে জানান, তিনি ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে শুধু বলেছিলেন, ‘তোমরা আন্দোলন করে যাও, দেশকে বাঁচাও’ পরবর্তীতে তোমরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমি তোমাদের সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দেব।
আর এই ক্ষোভেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার গ্যাংরা বাবার ওপর হামলা করে। খুব কাছ থেকেই রায়হান শর্ট গান দিয়ে পেছন থেকে গুলি করে। এতে মেরুদণ্ডসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলি লেগে তিনি সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় একজন বাবাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমরা বাবাকে ঢাকার ইবনেসিনায় নিয়ে যাই। কিন্তু তারা পুলিশ কেইস দেখে সেখানে রাখেনি। পরে আমরা বাবাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। কিন্তু শরীরের বিভিন্নস্থানে বুলেটের কারণে তার ভেতরের অঙ্গগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। ১০দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নেন।
বাবার এই মৃত্যু আমরা দুবোন এবং আমাদের মা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
এদিকে তাদের সান্ত্বনা দিতে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. শরীফুল ইসলামসহ একদল আইনজীবী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি যান।
মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আমরা নিহত আবুল কালাম আজাদের পাশে শুরু থেকে রয়েছি। এ পর্যন্ত তার হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তার চিকিৎসা ব্যয়ের দায়িত্ব নিলে আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর কাছ থেকে ২ লাখ টাকাসহ আমরা আরও কিছু মিলে মোট ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করি। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা আরও এক লাখ টাকা তার পরিবারের কাছে দিয়ে যাই।
কুমিল্লার আরেক আইনজীবী মো. মোস্তফা জামান বলেন, আবুল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনায় আমরা আইনজীবীরা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা ইউনিভার্সিটির অন্যতম সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, যেহেতু তার পরিবারের হাল ধরার কোনো ছেলে নেই, আমরাই এখন ছেলে হয়ে তার পরিবারের পাশে থাকবো এবং তার বড় মেয়ের একটি চাকরির চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৪
আরএ