ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএসএ) বলেছে, দাপ্তরিক অডিট আপত্তি ‘দুর্নীতি’ হিসেবে অবহিত করা গ্রহণযোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএফএসএর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথিত দুর্নীতিবিষয়ক একটি সংবাদের প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/বিএফএসএ দৃষ্টি গোচর হয়েছে।
সংবাদের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, কথিত অভিযোগগুলো প্রধানত অডিট আপত্তি সংক্রান্ত বিষয়াদি। দাপ্তরিক অডিট আপত্তি, যা প্রক্রিয়াধীন আছে এবং যা কর্মকর্তাদের পেনশনের সাথে সম্পর্কযুক্ত ও অডিট রিপোর্টে চিহ্নিত, সেসব দাপ্তরিক আপত্তি ‘দুর্নীতি’ হিসেবে অবহিত করা গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবাদে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয় যে, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নিজ ও পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। এ জাতীয় অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তবে কোনো বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ভিত্তিতে যদি কোনো কর্মকর্তার ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনানুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়, তাতে আমাদের সহযোগিতা ও সমর্থন থাকবে।
নিরীক্ষা বা অডিট সরকারের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া যাতে সরকারের ব্যয় সংশ্লিষ্ট আর্থিক নিয়মাবলী অনুসারে সম্পাদন হয়েছে কি-না তা যাচাই করা হয়। নিরীক্ষা অন্তে নিরীক্ষকরা তাদের মন্তব্য পেশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কার্যালয় তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং উভয়ের সমন্বয়ে দায় নির্ধারণ হয়। সরকারের প্রতিটি দপ্তরই অডিটের আওতাধীন। কোনো কর্মচারী/কর্মকর্তার কাছে অডিট বাবদ পাওনা থাকলে, তা সরকারি কোষাগারে অবশ্যই ফেরতযোগ্য। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি এই পাওনা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন তবে সেই পরিমাণ অর্থ তার পেনশন থেকে কর্তন করে আদায় করা হয়। সুতরাং দাপ্তরিক অডিট আপত্তিকে ‘দুর্নীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার কোনো অবকাশ নেই। বিগত বছরগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশের বাস্তবতা বিবেচনা না করে আর্থিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছ, এর ফলে দূতবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা অডিট আপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে মহাহিসাব পরিদর্শক দপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করে থাকে।
দুদকের যে চিঠির বরাত দিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে, তা এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তগত হয়নি। কী করে সংবেদনশীল এই চিঠি মিডিয়াতে প্রকাশ হলো তা দুদক কর্তৃপক্ষ অনুসন্ধান করে দেখবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। এ চিঠিতে যাদের নামোল্লেখ করা হয়েছে তাদের অনেকেই যথাসম্মানে তাদের কর্মজীবন শেষ করেছেন। তাদের সব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করে পেনশন ভোগ করছেন। অনেকে এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত আছেন। দুদকের এই চিঠির মাধ্যমে তথ্য চাওয়ায় এবং তা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির অবকাশ রয়েছে। ফলে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সম্মানহানীসহ পররাষ্ট্র ক্যাডার ও মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে তাদের বর্তমান গুরু দায়িত্ব পালনে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক যার ফলশ্রুতিতে সরকারের কাজ ও দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সর্বোপরি, কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ ব্যাতিরেকে এ জাতীয় ঢালাও মন্তব্য করা আইনের দৃষ্টিতেও অগ্রহণযোগ্য।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী যারা বিদ্যমান আইনি কাঠামোর বাইরে গিয়ে এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য কাজে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গোটা জাতির মতো ফরেন সার্ভিসে নিযুক্ত কূটনীতিকরাও সর্বোচ্চ ঐকান্তিকতা, একনিষ্ঠতা ও পেশাদারত্বের সাথে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সমগ্র জাতীয় স্বার্থের নিবেদিতপ্রাণ অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ১০টি কূটনৈতিক মিশনের ৩৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪
টিআর/এএটি