ঢাকা: নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করতে দুর্নীতিবাজের পরিবারের সদস্যরাও যেন ভোটে না দাঁড়াতে পারে সে আইনি সংস্কারের সুপারিশ এসেছে। একই সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনের দলীয় প্রতীক বাতিল, নারী নির্যাতনকারীকে ভোটের বাইরে রাখা, কালো টাকার প্রভাব রোধসহ একগুচ্ছ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এসব প্রস্তাব করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ‘আমি থাকছি আপনাদের সঙ্গে আজ বিকেল তিনটায়’ শীর্ষক ওই সভার সঞ্চালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নাম ঘোষণার পর তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুজনসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতাদের প্রস্তাব গ্রহণের উদ্দেশে এ সভার আয়োজন করেন।
সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একটা সুযোগ এসেছে। এটা বারবার আসে না। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
জাকির হোসেন নামে সুজনের এক সদস্য বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনে সুজনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দিতে হবে।
মোংলা সুজনের সভাপতি নুরুল আলম শেখ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনতে হবে। এজন্য নিরপেক্ষ প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে করা যায় এবং নির্বাচনের জামানত কমানো যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকা জেলার মিহির বিশ্বাস বলেন, জন্ম সনদের ভিত্তিতে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৮ বছর হলেই ভোটার হয়ে যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
নরসিংদী থেকে প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে যেন সবাই ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
কদমতলী থানা সুজনের সদস্য আরিফ বলেন, কালো টাকার প্রভাব রোধ ও সংখ্যানুপাত নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতি জোর দেন।
সভায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে রত্না হালদার, রাজশাহী সুজনের এনায়েতুল ইসলাম আরিফ, হুসাইন আহমেদ বিপ্লব, প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, খুলনা সুজনের অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদাসহ দুই শতাধিক সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।
তারা বলেন, জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যুনিবন্ধনের ভিত্তিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী যার বয়স যখন ১৮ হবে সে যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়ে যায়। এছাড়া নারী নির্যাতনকারী যেন ভোটে অংশ নিতে না পারে এবং পরিবেশবান্ধব নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ৬০ শতাংশ ন্যূনতম ভোট না হলে ভোট বাতিল। গরিব, সৎ মানুষ যেন ভোট করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিল, পোলিং এজেন্টদের কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা সরবরাহকরণ, ব্যবসায়ীরা যেন নির্বাচনে না আসতে পারে, পারিবারিকভাবে রাজনীতির অংশ হিসেবে যেন হুট করে নির্বাচনে না আসতে পারে, নির্বাচন অফিসে যোগসাজশ রোধ, দুর্নীতিবাজদের পরিবারের সদস্যদের ভোটের বাইরে রাখা, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর, অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা আনার প্রস্তাবও করেন তারা।
সভার সমাপনী বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংস্কার এক সময় গালি ছিল। এখন হচ্ছে সবার দাবি। আমরা যদি গণতন্ত্র চাই নিজের, দলের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
ইইউডি/আরআইএস