ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় ৬৩৪ দুর্গাপূজার মণ্ডপ, রং-তুলিতে ব্যস্ত কারিগর

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০২৪
বগুড়ায় ৬৩৪ দুর্গাপূজার মণ্ডপ, রং-তুলিতে ব্যস্ত কারিগর

বগুড়া: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেশের বিভিন্ন জেলার মতো বগুড়াতেও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

ইতিমধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্গা প্রতিমাগুলোকে সুন্দর করতে চলছে মৃৎ শিল্পীদের কাজ। শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিমাগুলো। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব মণ্ডপে চলে যাবে প্রতিমা। এজন্য বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে কারিগরদের রাত-দিন কাটছে প্রতিমার রং কাজে।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়া সদর উপজেলার উত্তর চেলোপাড়ার নববৃন্দাবন হরিবাসরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শেষ ধাপে চলছে প্রতিমা রঙের কাজ।

জানা যায়, গত বছর বগুড়া জেলার মোট ১২টি উপজেলায় ৬৬৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সর্বশেষ তথ্যমতে ৬৩৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী কদিনে এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। এ নিয়ে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রশাসনের দফায় দফায় আলোচনা চলছে।

বগুড়া জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্য মতে, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদরে ১১৭টি, শাজাহানপুরে ৪৮টি, শিবগঞ্জে ৫৩টি, সোনাতলায় ৪১টি, সারিয়াকান্দিতে ২৩টি, ধুনটে ২৮টি, গাবতলীতে ৬৩টি, শেরপুরে ৮৬টি, নন্দীগ্রামে ৪৫টি, কাহালুতে ২৭টি, আদমদীঘিতে ৬৩টি এবং দুপচাঁচিয়ায় ৪০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

দুর্গা উৎসব এগিয়ে এলে জেলার প্রতিমা শিল্পীদের কদর বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময় তারা কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় কাজকর্ম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এখন শেষ সময়ে আনন্দ-উৎফুল্লতা নিয়ে দিনরাত প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন তারা। সঠিক সময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে বলে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বাড়তি শ্রমিক নিয়ে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা শিল্পীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাদা মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন দেবী দুর্গার প্রতিমা। এখন রং তুলির আঁচড়ে সেই প্রতিমাকে দেওয়া হচ্ছে অনিন্দ্য সুন্দর রূপ। বলা যেতে পারে মৃৎশিল্পীদের হাতের জাদুতে রঙ-তুলিতে ফুটে উঠছে প্রতিমার সৌন্দর্য। অন্যদিকে মৃৎশিল্পীদের পাশাপাশি ডেকোরেটর মিস্ত্রিরাও পূজা মণ্ডপের গেইট, প্যান্ডেল ও লাইটিংয়ের কাজে ভীষণ ব্যস্ত।

আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণের মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে পরবর্তী চার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ আপামর বাঙালি মেতে থাকবে দুর্গোৎসবে। এবার দেবীর আগমন দোলায় (পালকি) এবং গমন হবে গজে (হাতি)। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। এখন ঢাক-ঢোল, শঙ্খ ধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভক্তরা।

বগুড়া সদর উপজেলার উত্তর চেলোপাড়ার প্রতিমার কারিগর কাজল প্রামাণিক বাংলানিউজকে জানান, শেষ সময়ে এখন প্রতিমা রংয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। তার কারখানায় মোট পাঁজন কাজ করছেন। বিগত তিন মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে তার কারখানায়। প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে তার কারখানায় ২০-২৫টির মত প্রতিমা তৈরি করা হয়। এ বছর ১৯টি প্রতিমার কাজ করতে পেরেছেন। জেলার বাহিরে গিয়েও প্রতিমার কাজ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা চলে যেতে শুরু করেছে।

বগুড়া শাজাহানপু উপজেলার আড়িয়া পালপাড়া এলাকার প্রতিমা কারিগর তন্ময়, নরেশ, শুভ বাংলানিউজকে বলেন, তাদের অর্ডার নেওয়া প্রতীমাগুলোর রংয়ের কিছু কাজ শেষে সেগুলো দু-একদিনের মধ্যেই ডেলিভারি দেবেন। প্রতিবছরই প্রতিমা তৈরিতে সরঞ্জাম খড়, সুতা, বাঁশ ছাড়াও রং এবং অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যায়। এতে প্রতিমা তৈরিতে তাদের খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হচ্ছে।

প্রতিমা কারিগররা বলেন, গত বছর বাঁশ প্রতিপিস কিনেছেন ২৫০ টাকায়। সেই বাঁশ এবছর কিনেছেন ৩০০ টাকায়, খড় প্রতি আঁটি পাঁচ টাকার বিপরীতে সাত টাকা, মাটি প্রতি ভ্যানের বিপরীতে প্রায় ২৫০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এছাড়াও দাম বেড়েছে রং, সুতো ও তুলির। দিন দিন প্রতিমা তৈরির সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকটাই বিপাকে পরতে হচ্ছে তাদের। এ বছর তাদের তৈরি প্রতিমার মধ্যে ২০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম রয়েছে।

বগুড়া জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু রায় বলেন, বগুড়া পূজা উদ্‌যাপনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ পূজা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী। পাশাপাশি নিজ দায়িত্বে প্রতিটি মন্দিরে কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাসহ সম্ভব হলে সিসি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, বগুড়ায় পূজা মণ্ডপগুলোতে থাকবে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কেউ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও বলেন, থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। নিরাপত্তার জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা সদস্যরাও টহল দিবে। পূজায় মাদকের বিস্তার রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। এছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়কে যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সজাগ থাকবে।

সবমিলিয়ে বগুড়ায় পূজাকে ঘিরে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা পালন করবে এটাই কাম্য সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৪
কেইউএ/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।