ঢাকা: স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেই যুদ্ধে তারা এখনো জয় লাভ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
রোববার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘ঢাকা রাইজিং’ কর্মসূচির আওতায় অভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজন ও আহতদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের একটি দফা ছিল। যে দাবির ভিত্তিতে মানুষ শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, সেই দাবি হলো- ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। এটা ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি বলেন, দেশে এখনো সর্বত্র দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। যে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা ছিল, সেটি এখনো বিলোপ হয়নি। আমরা শহীদদের এখনো গণতান্ত্রিক দেশ উপহার দিতে পারিনি। যার জন্য ছাত্ররা তাদের জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটি নামের একটি প্ল্যাটফর্ম বানিয়েছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রাথমিকভাবে আটটি কাজ হাতে নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রথম কাজ হলো আন্দোলনে যারা ছাত্র-জনতাকে খুন করেছে, তাদের বিচার করা। এ বিচারের জন্য আমরা ট্রাইব্যুনালে মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। একটি লিগ্যাল টিম গঠন করেছি। দ্বিতীয়ত, যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা ডাক্তারদের একটি কমিউনিটি গঠন করেছি। তারা দিন রাত পরিশ্রম করে আহতদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তারা জুলাই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে কাজ করছেন৷
তিনি বলেন, এখনো অনেক আহত ব্যথায় কাতড়াচ্ছেন। তারা সেবা পাচ্ছেন না। আমরা রাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত শহীদদের পরিবারগুলো পুনর্বাসন করতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি এটা না করা হয়, তাহলে গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে মানুষ নেমে এসেছিল, আমরা সেভাবে আহত ও শহীদদের পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামব।
যাদের হাতে এখনো রক্তের দাগ লেগে রয়েছে, তারা কীভাবে এখনো সচিবালয়ে ঘোরাফেরা করছে- প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, যাদের হাতে রক্তের দাগ, তারা এখনো বিভিন্ন এলাকায় আমাদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত এগুলোর সমাধান করতে। তা না হলে আমরা আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথে কর্মসূচি পালন করব।
তিনি বলেন, টাকা দিয়ে কারো মর্যাদা কেনা যায় না। আত্মমর্যাদা নিজের ভেতর থাকে। যেভাবে আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি, আগামীতেও আমাদের লড়াই করে নিজের অধিকার নিজে আদায় করতে হবে৷ কেউ আমাদের অধিকার দিয়ে যাবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সারা দেশে যেসব ছাত্র ভাইরা জীবন দিয়েছেন, তারা এমনি এমনি জীবন দেননি। তারা নতুন বাংলাদেশ চেয়ে জীবন দিয়েছেন। এখন নতুন বাংলাদেশে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব শহীদ ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা। তাদের দ্বিতীয় দায়িত্ব যারা খুন করেছে, যারা খুনের হুকুম দিয়েছে, অস্ত্র উঁচিয়ে ধরেছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের (জেএসএসবি) সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুব রহমান স্নিগ্ধ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মশিউর রহমান, আতাউল্লাহ, আল আমিনসহ যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২৪
এসসি/এসআই