ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া এবং ফুলপুর উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। মানুষের ঘরবাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে পানি।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, বৃষ্টি না হলে পানি নামতে আর দুই-একদিন লাগবে। তবে বন্যাদুর্গত এলাকায় যে পরিমাণ ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। বাড়িঘরের পানি নামতে শুরু করেছে। আশা করছি, দুই-একদিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।
তিনি আরও জানান, বন্যা দুর্গতদের মধ্যে নগদ সাত লাখ টাকা ও ৬৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও ত্রাণ দিচ্ছে।
জানা যায়, বন্যায় ফুলপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে পানিবন্দি হন ২৪ হাজার মানুষ। উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ভাটপাড় ও সিংহেশ্বর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে যাচ্ছে।
ভাটপাড় গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, বাড়ির উঠানে এখনো কোমর পানি। তাই ছাগলটিকে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। আজ সকাল থেকে পানি কমছে, বৃষ্টি না হলে আর দুই-একদিন লাগবে পানি নামতে। কয়েকটা দিন দুর্ভোগে থাকলেও কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি।
একই গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৩ সালের পর এবারের বন্যা সবচেয়ে বড় হয়েছে। আমার ৯০ কাঠা জমির ধান তলিয়ে আছে পানিতে। কোনো উপায় পাচ্ছি না। আমার মতো হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল হবে। বিএনপি নেতাকর্মীরা ত্রাণ সহায়তা করলেও প্রশাসনের কেউ আসেনি।
সিংহেশ্বর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নয়ছুদ্দিন আকন্দ বলেন, মানুষের স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এরশাদের সময়ে বাংলাদেশ বন্যা হয়েছিল তখন ব্রিটেনের রাজা-রানি এসেছিলেন সহায়তা নিয়ে। এখন আর এমনটি হয় না। আমরা চাই অন্তত আমাদের সরকার সহযোগিতা করুক।
হালুয়াঘাট উপজেলার আমতৈল গ্রামের হাসিনা বানু বলেন, মানুষের বাসায় কাজ করে আমার দিন চলত। বন্যার কারণে এখন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই বেলা ঠিক মতো খেতেও পারছি না। কোন সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ত্রাণসামগ্রী আমাদের খুব প্রয়োজন।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ফুলপুরেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। মানুষের বাড়ি ঘরের পানি নামতে শুরু করেছে। আশা রাখছি, বৃষ্টি না হলে দ্রুত পানি নেমে যাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত হয়নি। আর পানিও কমতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে, পানি কমে যাবে। আমাদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন বানভাসিদের মধ্যে শুকনো খাবার, ওষুধ বিতরণ করছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে হালুয়াঘাটে বন্যা হয়। উজানের পানি কমে এখন নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরছে। হালুয়াঘাটে ১৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাময়িকভাবে তাদের সহযোগিতা করার পাশাপাশি ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সহযোগিতা করতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
এসআই