ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা দেশের জন্য অর্থনৈতিক দুর্যোগ বয়ে আনবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা দেশের জন্য অর্থনৈতিক দুর্যোগ বয়ে আনবে

বরিশাল: পায়রায় অ্যাক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।   পরিবেশ সংরক্ষণ, অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা ও জ্বালানি নীতি পুনর্বিন্যাসে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশাল, প্রান্তজন, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মজোট এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন  ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের আয়োজনে বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির হল রুমে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, পায়রায় সম্প্রতি বাতিলকৃত এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পটি পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন ও অ্যাক্সিলারেট এনার্জি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে টার্মিনালটিকে ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট স্থাপন করে পাইপলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে এই কোম্পানিটি শুধু মাত্র ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ডলার দিতে হতো।

ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশালের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুভাষ দাস বলেন, বর্তমানে দুটি সক্রিয় এলএনজি টার্মিনাল প্রতিদিন প্রায় ৪ দশমিক ৫ লাখ ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া, এলএনজি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন সরাসরি গ্যাসের আমদানি খরচের সাথে যুক্ত হওয়ায় এই খরচ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ওপর বাড়তি বোঝা তৈরি করছে। গ্যাসের আমদানি খরচ বাড়লে প্রতি ইউনিট গ্যাসের জন্য সরকারকে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, তা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বিদ্যুতের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাকে হ্রাস করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করবে। এছাড়া, অ্যাক্সিলারেট এনার্জির প্রস্তাবিত পাইপলাইন এবং পুনরায় গ্যাসিকরণ অবকাঠামো স্থাপনের জন্যও বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন হতো। সর্বোপরি, এই ব্যয়বহুল পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য টেকসই নয়।

ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশালের সদস্য প্রফেসর শাহ্ সাজেদা বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দেশের পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের পথে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিলের ফলে দেশের নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলো সুরক্ষিত থাকবে এবং জ্বালানি খাতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নীতির বাস্তবায়নকে উৎসাহিত করবে। এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় খরচ হয় প্রায় ৫৭ টাকা। এ অবস্থায় এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা দেশের জন্য অর্থনৈতিক দুর্যোগ বয়ে আনবে। যদিও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এলএনজির বৈশ্বিকভাবে দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। তবে, বাংলাদেশের জন্য সেই দাম দিয়ে কেনাও কঠিন হবে। এতে এলএনজির সক্ষমতা অলস হয়ে পড়ে থাকতে পারে। সুতরাং, আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতি দেশের জন্য ভালো হবে না।

বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে তা পরিবেশের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। বিশেষ করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাস্তুসংস্থান, মৎস্য সম্পদ ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ত। তাই এ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত কেবল পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নের দিকেও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত পরিবেশ সংরক্ষণের আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। এটি দেখিয়ে দেয়, সরকার পরিবেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের জ্বালানি খাতকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশালের সদস্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, এলএনজির থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি কার্যক্রম সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের খরচ কমাবে এবং পরিবেশও ভালো থাকবে। ভবিষ্যতে বড় ধরণের প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও দেশের কথা ভাবতে হবে। প্রকল্প করে লোকসান দেওয়ার থেকে আগে থেকে পরিকল্পিত প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব।

আয়োজক সংগঠনগুলো সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতেও যাতে এ ধরনের জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ অব্যাহত থাকে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জ্বালানি নীতি আরও শক্তিশালী হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশালের সদস্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী, পুষ্প চক্রবর্তী, এস এম রাশেদ, বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন, সাবেক সভাপতি সুশান্ত ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহসহ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
এমএস/এমজে

 
 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।