ঢাকা, শনিবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মেঘনায় ধরা পড়ছে ইলিশ, বেচাকেনায় সরগরম আড়ত

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৪
মেঘনায় ধরা পড়ছে ইলিশ, বেচাকেনায় সরগরম আড়ত

চাঁদপুর: মিঠা পানিতে ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় হওয়ায় গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত নদনদীতে মাছ ধরা, বিক্রি, পরিবহন, সরবরাহ নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে রোববার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে।

 

এরপরই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অনান্য মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত ধরে আনা ইলিশ জেলেরা বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন নদী উপকূলীয় আড়তগুলোতে। তিন সপ্তাহ পরে আবার ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে আড়তগুলো। নিষেধাজ্ঞার আগের চাইতে ইলিশের দামও এখন কিছুটা কম।

সোমবার (৪ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট গিয়ে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে ইলিশ নিয়ে আসছেন জেলেরা। আবার অনেক জেলে নৌকা ও জাল নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় বেরিয়ে পড়ছেন।

বরফ ছাড়া এসব ইলিশ জেলেদের উপস্থিতিতে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। মুহূর্তের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ইলিশ। পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে। তবে সংখ্যায় কম।

সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে মো. শরীফ বলেন, ভোরে এক নৌকায় তারা তিনজন মেঘনায় ইলিশ ধরতে নামেন। তাদের পাওয়া ছোট-বড় ইলিশ বিক্রি করেছেন পাঁচ হাজার টাকা। কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবার নামবেন নদীতে।

নরসিংদী জেলা থেকে তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে মোস্তাক নামে একজন বলেন, এর আগেও হরিণা মাছঘাটে এসেছেন। তাজা ইলিশ কেনার জন্য এবারও এসেছেন। এ ঘাটের ইলিশে কোনো ভেজাল নেই। ছোট বড় ১৩ হাজার টাকার ইলিশ কিনেছেন তারা। দামও ভালো পেয়েছেন।

পাঙ্গাস মাছের পাইকারি বিক্রেতা কালু পাটওয়ারী বলেন, গত বছর এসময়ে ইলিশের জালে অনেক পাঙ্গাস ধরা পড়েছে। এ বছর সংখ্যায় খুবই কম। আজ ছোট সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি ৭০০ টাকা এবং বড় সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। জেলেদের ধরে আনা প্রতি পাঙ্গাসের ওজন পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে আট-১০ কেজি।

ঘাটের আড়তদার সেলিম সৈয়াল বলেন, আমাদের এ ঘাটে ইলিশ হালিতে বিক্রি হয়। ছোট সাইজের একহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। মাঝারি সাইজের (৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজন) এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ছয় হাজার টাকায়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন আক্তার হোসেন নামে এক ক্রেতা।  

তিনি বলেন, আজ আগের তুলনায় দাম একটু কম আছে। ৪৫০ টাকা করে পাঁচ হালি ইলিশ কিনেছি। ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। নিষেধাজ্ঞার আগে এ সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

এ আড়তের সবচেয়ে প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার ২২ দিন যে নিষাধাজ্ঞা দিয়েছে, তা আমরা মেনেছি। আজ সকাল থেকেই জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসছেন। তবে ইলিশের সাইজ ছোট। বড় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। আবার কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ডিম ছেড়ে দেওয়া। তবে কয়েকদিন পর বোঝা যাবে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের বিচরণ কি পরিমাণ আছে।

ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান ইলিশের প্রাপ্যতা সম্পর্কে বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। বছর জুড়েই ইলিশ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এসময়টাতে সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। তবে ইলিশের চলার পথ সুগম করলে নদীতেও বছরজুড়ে ইলিশ পাবেন জেলেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।