খুলনা: খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ায় প্রায় দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতায় পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টির পানিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয় বিল ডাকাতিয়াতে।
এমন পরিস্থিতি নিয়ে বাংলানিউজে সরেজমিন একাধিক প্রতিবেদন করা হয়েছে। সবশেষ ‘বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশাল প্রকল্প নিতে হবে’ শিরোনামে ভিডিওসহ একটি সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন প্রকাশ হয় গত ৮ নভেম্বর। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ওই সাক্ষাৎকারে এ অঞ্চলের মানুষের করুণ চিত্র তুলে ধরেন বাংলানিউজের কাছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মোবাইল ফোনে নাজমুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা-৫ (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিয়ে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সেটা আমরা দেখেছি। জলমগ্ন হয়ে ভোগান্তিতে থাকা মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য জলাবদ্ধাতা নিরসনে দ্রুত একটা সমাধান করতে চায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের মতামত নিয়ে এ কাজে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের পরামর্শ নিয়ে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়ে জলাবদ্ধতার স্থায়ী একটি সমাধান করতে চাই।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবেদনটি দেখে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যেটি ডুমুরিয়ার ইউএনও এরই মধ্যে জেনেছেন। এখন যা যা করা দরকার সে বিষয়ে তিনি যোগাযোগ করছেন। একটা প্রপোজাল তৈরি করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয় পাঠাবেন।
বিল ডাকাতিয়ার মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় বাংলানিউজের প্রতি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন সাবেক এ সংসদ সদস্য।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, এবার বিল ডাকাতিয়ার জলবদ্ধতার খুব খারাপ অবস্থা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে কী করা যায় এমন একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে বলেছেন। সে বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরামর্শ নিয়েছি। ওপর থেকে দেখে আমরা হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছি না। আমরা একটু সময় নেব। প্রয়োজনে ১-২ সপ্তাহ সময় নেব। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা আমরা যেভাবে গতানুগতিক কাজ করি এর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্যদের নিয়ে প্রয়োজনে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ এনে আমরা কাজ করবো। জেলা প্রশাসক আমাকে যে পরামর্শ দিলেন তা হলো ডুমুরিয়া ও ফুলতলার বিভিন্ন লোকসহ অভিজ্ঞ লোকদের সঙ্গে বসে একটি পরিকল্পনা করে কাজ করতে। এরপর এটা আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করবো। বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসন এখন আমাদের প্রধান এজেন্ডা। এটাকে আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া এবং যশোর জেলার অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা এলাকায় বিল ডাকাতিয়ার বিস্তৃতি। এতে চাষাবাদযোগ্য ৩০ হাজার একর জমি রয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে প্রায় দুই মাস ধরে তলিয়ে আছে বিলের জমি। মাছচাষিদেরও বিপাকে পড়তে হয়েছে। নদীতে পলি জমাট এবং অতিবৃষ্টিই এর মূল কারণ। এজন্য ফসল নষ্ট, আয়ের পথ বন্ধের পাশাপাশি চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এ এলাকায়। পরিস্থিতি এমন যে, বিল ডাকাতিয়া এখন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবি এখানকার পানিবন্দি প্রায় ১৫ লাখ মানুষের।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৪
এমআরএম/এইচএ/