মৌলভীবাজার: শীত মানেই কুয়াশার চাদর। কুয়াশার ঘণভূত ধোঁয়া।
রোববারের (২৪ নভেম্বর) সকালটা ছিল পাখির খোঁজে হাওরের একেবারে শেষ সীমানায়। ঘড়ির কাটা তখন সোয়া ৭; কুয়াশার চাদর ঘিরে ছিল হাওরের বিস্তীর্ণ প্রান্তর।
ষড়ঋতুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয় পৌষ ও মাঘ। এই দুই মাস শীতকাল হলেও অগ্রহায়ণ মাস থেকেই ঋতুর সূচনা। এমন আগমন গাছে গাছে বা এর পত্র কুঞ্জে, জলে-স্থলে সর্বত্রই লক্ষ্য করা যায়।
শুষ্ক-কাঠিন্য এবং রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তিরূপেই শীতের আবির্ভাব ঘটে। তবুও এ শীতের শুভ্রতার প্রকৃতি অনেকেরই ভালো লাগে, মন ছুঁয়ে যায়। মূলত শীত শুষ্ক চেহারা আর হিমশীতল অনুভব নিয়ে আসে। সন্ধ্যা রাতে হালকা গরম অনুভব হলেও মাঝ রাতের দিকে কাঁথা মুড়ি দিতে হচ্ছে পল্লীবাসীদের। ভোর থেকেই চারপাশে কুয়াশা দেখা গেলে সূর্য ওঠার একটু পরেই তা কাটতে শুরু করে।
এ সময় গ্রামবাংলা যেন শীতের চাদর মুড়ি দেয়। ভোরবেলা ঘন কুয়াশার ধবল চাদরে ঢাকা থাকে। হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপিয়ে শীত জেঁকে বসে। শীতের দাপটে প্রকৃতি নীরব হয়ে যায়। সবুজ প্রকৃতি রুক্ষ মূর্তি ধারণ করে। শীতের শুষ্কতায় অধিকাংশ গাছপালার পাতা ঝরে পড়তে থাকে। শীত তার চরম শুষ্কতার রূপ নিয়ে প্রকৃতির ওপর জেঁকে বসে। রুক্ষতা, তিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে শীত আসে। শীতের তাণ্ডবে প্রকৃতি বিবর্ণ হয়ে পড়ে।
এই হাওর এলাকায় সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে প্রকৃতির অন্যতম প্রধান এ ঋতু। প্রকৃতি এ সময়ই শীতের পরশ বুলিয়ে যাওয়া শুরু করে।
দিনে সূর্যের তাপের প্রখরতাও কমতে থাকে। সকালের কোমল রোদে শিশির বিন্দু মুক্তোদানার মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে। মাঠে-ঘাটে শ্রমজীবী বা মৎস্যজীবী মানুষরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ পান। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়লে আরামবোধ যেন আরও বেড়ে যায়। তারপর সন্ধ্যার পল্লী যেন সকালের মতোই নীল কুয়াশার আঁচলে আচ্ছাদিত হয়ে যায় পরম মমতায়। এ মমতা যে অনাদিকালের।
গ্রামবাংলা তো বটেই, শহরেও এ সময় কখনো বয়ে যায় শিরশিরে উত্তরা সমীরণ। রাত যত বাড়ে, তত শীতের অনুভবও বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতির এই পরিবর্তন বার্তা দিয়ে যায় এই বুঝি শীত এসে গেল।
প্রতি বছর শীতের এ আগমনী বার্তা যেন প্রকৃতিতে এক ভিন্ন রকম চাঞ্চল্য নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে ষড়ঋতুর মধ্যে চারটি ঋতু উপলব্ধি করা যাচ্ছে। হেমন্ত এবং বসন্তের প্রকৃত রূপ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে হেমন্ত শেষে শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ।
গত দুদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে চায়ের রাজধানীখ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা শ্রীমঙ্গলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৬টা এবং ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শনিবারও এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৪
বিবিবি/এমজে