জামালপুর: বছরের শেষ সময়ে শীতের আবহে তৃতীয়বারের মতো জামালপুরের মাদারগঞ্জে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী জামাই মেলা। গ্রামাঞ্চলে শীতের পিঠার পাশাপাশি জামাইদের মিলনমেলা ঘটাতেই বসেছে এই উৎসব।
মেলায় রয়েছে বড় মাছ, বড় মিষ্টিসহ মুখরোচক সব খাবার। মেলাকে কেন্দ্র করে ঈদের আনন্দ বইছে গোটা অঞ্চলে। এমন ব্যতিক্রমী মেলা প্রতিবছরই আয়োজন করার দাবি স্থানীয়দের।
কর্তৃপক্ষ বলছে- গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন তারা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, রোপা আমন ধান কাটা শেষ, ফসলের এই খোলা মাঠে তিন শতাধিক দোকান নিয়ে বসেছে জামাই মেলা। এ নিয়ে গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরা মেলা মাতিয়ে তুলেছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জের তেঘরিয়া অঞ্চলে বিকেল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত মেলায় থাকছে উপচে পড়া ভিড়। জামাইরা স্ত্রী, সন্তান নিয়ে আসছেন মেলায়। করছেন কেনা-কাটা, ভোজন।
বছর শেষে জামাইকে দাওয়াত করে নতুন চালের পিঠা-পুলির সঙ্গে বড় মাছ, মিষ্টিসহ মুখরোচক খাবার খাইয়ে আনন্দ উদযাপন করবেন এই অঞ্চলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। জামাইদের জন্য এমন আয়োজন দেখে ঈর্ষান্বিত অবিবাহিতরা।
আজিজুল হক নামে এক বৃদ্ধ বলেন, তিন বছর ধরে আমরা এই মেলা দেখতেছি। আমাদের এই এলাকার জামাইদের আদরের অংশ এটি। প্রতিবছর শীতে জামাইদের দাওয়াত দেওয়া হয়। তারপর মেলা থেকে নানা জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে গিয়ে খাবারের আয়োজন করা হয়।
পলাশপুর এলাকার জামাই মো. জুবায়ের বলেন, দুই বছর যাবৎ আমি শ্বশুরবাড়িতে আসি। সেখানে এলেই এই মেলায় আসা হয়। এখানে সব রকম পণ্য পাওয়া যায়। আমাদেরও ভালো লাগে। কারণ বছরে একবারই এমন আয়োজন দেখা সম্ভব হয়। শুধু আমি নই এই অঞ্চলের জামাইদের মেলা বসে এখানে, সেসময় সবার সঙ্গে দেখা হয়।
মেলায় পাওয়া যাচ্ছে দেশি, হাইব্রিডসহ সাগরের বিভিন্ন জাতের দামি দামি মাছ। সুযোগ রয়েছে জীবন্ত অবস্থায় দেখে কেনার। এছাড়াও পাতা মিষ্টি, বালিশ মিষ্টিসহ সার্কাস, দোলনা, নাগরদোলা, কাপড়, আসবাবপত্র-কসমেটিকের দোকান নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। এছাড়া মেলাতে সেবামূলক স্টল বসেছে, সেখানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হচ্ছে। মেলায় বেচা-বিক্রিতে বেশ লাভবান হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
মিষ্টি ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, তিনদিন হলো মেলা চলছে। আমাদের বেচা-কেনা ভালো। জামাইরা আসে শ্বশুরবাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যায়।
মাছ ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, এই মেলায় মূলত মাছের সমাহার থাকে। সাগর, নদী ও বিলের মাছ পাওয়া যায়। পাঁচ থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের মাছও আছে এখানে।
মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। এমন মেলা প্রতি বছরই আয়োজন করার দাবি নতুন প্রজন্মের।
ঢাকা থেকে আশা শিক্ষার্থী আনদালিফ বলেন, এটি গ্রামের ঐতিহ্য। এখানে চরকি থেকে শুরু করে সব কিছু আছে। আমি এই মেলার জন্যই মাদারগঞ্জে বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে এসেছি। এমন সংস্কৃতি সব সময় গ্রাম বাংলায় থাকুক আমরা এই প্রজন্ম তাই চাই।
জামাই মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই মেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে। ১৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই জামাই মেলা চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই মেলায় রয়েছে তিন শতাধিক স্টল। এবার এই মেলায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা বেচা-কেনার আশা রয়েছে। মেলার নিরাপত্তায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সিসিটিভি ক্যামেরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
আরএ