ঢাকা, সোমবার, ২২ পৌষ ১৪৩১, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকায় কূটনীতিকদের রিকশাপ্রীতি

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৫
ঢাকায় কূটনীতিকদের রিকশাপ্রীতি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা

ঢাকা: রিকশা ঢাকা শহরের এক ঐতিহ্য। তাই বিদেশ থেকে কেউ আসলে ঢাকার রিকশার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকেন।

অনেকেই রিকশার পেইন্টিংয়ের প্রতিও তীব্র  আকর্ষণবোধ করেন। আর এ থেকে বাদ পড়েনি ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকরাও।

বিদেশি কূটনীতিকরা ঢাকায় সাধারণত তিন বছরের জন্য পোস্টিংয়ে আসেন। আর এই সময়ে এ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি তারা ঝুঁকে থাকেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো রিকশা।

বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে ঢাকায় অবস্থানকালে বিদেশি কূটনীতিকরা রিকশায় চড়েছেন। কেউ কেউ কৌতূহলবশত রিকশা চালিয়েছেন। আবার কেউ কেউ রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়েছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে রিকশা চালিয়েছেন। তিনি মজা করে রিকশা চালিয়ে সেই ভিডিও পোস্ট করেছেন নিজের ফেসবুকে। তার রিকশা চালানোর সে ভিডিও সবাই প্রশংসা করেছেন।

 সৈয়দ আহমেদ মারুফ

রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের ১৪ তলায় রিকশা চালিয়েছেন তিনি। আর সে রিকশায় ছিলেন তার স্ত্রী ও কন্যা।

ভিডিও পোস্টে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ লিখেছেন, কোথায় যাবে, মিস?  লা মেরিডিয়ানের ১৪ তলায় রিকশা টানা। জীবিকা অর্জনের জন্য প্রায় সমস্ত আবহাওয়ায় সারাদিন ধরে রিকশা টানা সত্যিই খুব কঠিন। রিকশাচালকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। স্যালুট।

ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিদায় নেন অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডে। রাষ্ট্রদূত থাকাকালে তারও রিকশার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। ২০২২ সালে বাংলাদেশ-সুইডেন সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি একটি ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্গ ফন লিন্ডেকে শাড়ি পরে রিকশা চালাতে দেখা গেছে। সেই ছবি ও ভিডিও ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও টুইটার অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। এছাড়া ২০২৪ সালে ৪ জুলাই তিনি ঢাকা থেকে বিদায়ের আগে ফেসবুকে এক পোস্টে আলী নামে এক রিকশাওয়ালা ছবি দিয়ে বলেন,  ঢাকার সবচেয়ে ভালো রিকশাওয়ালা আলী। গত ৪ বছর আমাকে ও আমার বাচ্চাকে বহন করেছে।

ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতেরও রিকশার প্রতি আকর্ষণ দেখা গেছে। ২০২২ সালের  জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে দায়িত্ব পালন শেষে বিদায় নেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার।  তিনি বিদায়ী বার্তায় যেসব বিষয় উল্লেখ করেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল রিকশা। তিনি বিদায়ী বার্তায় বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পরে রিকশার রঙ আর চালকদের মুখের কথা মনে পড়ে যাবে।
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড্যান মজিনা। তারও রিকশার প্রতি আকর্ষণ ছিলো। তিনিও বিভিন্ন সময়ে রিকশায় চড়েছেন। ঢাকায় থাকাকালে তিনি  লুঙ্গি ও সেন্ডেল পরে একটি রিকশার সামনে পোজ দিয়ে মজা করেই  বলেছিলেন,আমার নতুন রিকশা কেমন লাগছে? আমি পরবর্তী ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।

বিদেশি কূটনীতিকদের রিকশা প্রীতির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলানিউজকে জানান, বিদেশি কূটনীতিকরা যে দেশেই দায়িত্ব পালন করতে যান, সেখানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে থাকেন। সে কারণেই ঢাকায় থাকাকালে অনেকেই ঐতিহ্য হিসেবে রিকশার প্রতি আকর্ষণবোধ করেন। আবার কোনো কোনো কূটনীতিক পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির অংশ হিসেবেও রিকশাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ৪, ২০২৫
টি আর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।