ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

 লাঠিটিলা পাহাড়ে বইছে স্বস্তির সুবাতাস

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৫
 লাঠিটিলা পাহাড়ে বইছে স্বস্তির সুবাতাস লাঠিটিলা পাহাড়ির বনের গিরিপথ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা পাহাড়ে এখন বইছে স্বস্তির সুবাতাস। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভেঙে আধুনিকায়নে জনমনে যে আতঙ্ক ছিল তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে।

জানা যায়, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক নির্মাণের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিগত সরকারের সময়ে। তবে পরিবেশ ও প্রকৃতির কথা বিবেচনায় রেখে এর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত বাতিলে খুশি বন এলাকার বাসিন্দারা।

তারা জানান, পার্ক নির্মাণ হলে তাদের বাসস্থান ও জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়তো। এদিকে বন বিভাগ বলছে, সংরক্ষিত এ বনভূমিকে আরও উন্নত করতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণের অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপরই তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে পড়ে এ সিদ্ধান্ত।

মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তের বিস্তৃত পাহাড়-টিলা নিয়ে দেশের অন্যতম সংরক্ষিত বন, লাঠিটিলা। পাহাড়ের বুক জুড়ে ৬০ থেকে ৬৫ বছরের গড়ে উঠা সেগুনবাগান আর জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য আঁধার এ এলাকা। সে সঙ্গে এ লাঠিটিলা বন ইন্দো-মিয়ানমার জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের অংশ। এটি হাতি চলাচলের একমাত্র করিডোর হিসেবে দেশে বেশ পরিচিত। শুধু তাই না; ৩৫০টি পরিবারের স্থায়ী বসবাস পাশাপাশি এ পাহাড়ে রয়েছে, প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো সুমিষ্ট কমলা আর সিলেটি আধা লেবুর বাগান। যা থেকে বছরে কয়েকশো কোটি টাকা আয় হয়।

তবে পরিবেশবাদীদের কঠোর আপত্তির পরও বিগত শেখ হাসিনা সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত এ লাঠিটিলা বনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়। এ লাঠিটিলা বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জায়গায় ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে সাফারি পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। আর ২০২৮ সালের সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এ বনে নানা স্থাপনা, হ্যালিপ্যাড, বিশাল আকৃতির কৃত্রিম লেক ও পাকা সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানায়। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রামের পরও আওয়ামী লীগ সরকার সাফারি পার্ক নির্মাণে পিছপা হয়নি। অবশেষে সংরক্ষিত এ বনে পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে। এতে খুশি স্থানীয়রা।

তারা জানান, পার্ক নির্মাণ হলে তাদের বাসস্থান ও জীবিকা হুমকির মধ্যে পড়তো। কাটা পড়তো বিস্তীর্ণ এলাকার ফলের বাগান। কয়েক যুগ ধরে লাঠিটিলায় বসবাসকারী মোরশেদ মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। সাফারি পার্ক বাতিল করায় তারা এ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনেকে বলেন, তারা পাহাড় রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।

এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষারও দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিবপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতিবাদ জানিয়েও পরিবেশবাদীরা সাফারি পার্ক নির্মাণ আটকাতে পারেনি। আজ এ সরকার সাফারি পার্ক নির্মাণ বাতিল করায় তাদের স্বাগত জানাচ্ছি।

এদিকে এ সংরক্ষিত বনের হাতি-বাঘ সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সে রকম উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানালেন মনু রিভার ভয়েসের নির্বাহী প্রধান আ স ম সালেহ সোহেল।

জুড়ী লাঠিটিলা ফরেস্ট রেঞ্জার মো. নাজমুল হুসাইন জানান, স্থানীয় লোকজনের সম্পৃক্ততায় এ বনকে আরও উন্নত করার পরিকল্পনার কথা ভাবছে এ সরকার। ১৯২০ সালে সরকার লাঠিটিলা পাথারিয়া হিল রেঞ্জের আওতায় নিয়ে এসে সংরক্ষিত বন ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৫
বিবিবি/জেএইচ  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।