ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

৪০ হাজার কৃষি যন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের ৬ অভিযান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
৪০ হাজার কৃষি যন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের ৬ অভিযান অভিযানে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট।

ঢাকা: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’- এর আওতায় হারভেস্টার মেশিনসহ অন্যান্য ৪০ হাজার কৃষি যন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে সারা দেশে একযোগ ছয়টি স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট হতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযান এক: কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষিযন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় হতে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কার্যালয় সরেজমিনে পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে টিম হারভেস্টার মেশিন বিতরণে অনিয়ম, প্রকৃত কৃষক নির্ধারণে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়, কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের কাছে হারভেস্টার মেশিনের দাম বাবদ প্রকৃত দামের চেয়ে তিন গুণ বেশি অর্থ আদায়, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ইত্যাদিসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায়। অভিযানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অভিযান দুই: কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় সরকারের ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের ভর্তুকির কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুষ্টিয়া হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসের আওতাধীন ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অনিয়ম/দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় উক্ত প্রকল্পে মোট আটটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন (প্রতিটির মূল্য ৩৮ লাখ টাকা) কৃষকদের মধ্যে বিতরণ দেখানো হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ গ্রাহকের আবেদন, প্রত্যয়নপত্র ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রে থাকা তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের গরমিল পাওয়া গেছে। অধিকন্তু, প্রদত্ত মোবাইল নম্বরসমূহ ভিন্ন ব্যক্তির মর্মে অভিযানকালে দেখা যায়। টিম জানতে পারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট আটটি পটেটো ডিগার (প্রতিটির মূল্য দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা) বিতরণ দেখানো হয়েছে। একই পরিবারের তিনজনের নামে এই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে, আবার একজন গ্রাহকের আবেদন ফরমে কৃষি কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত ফর্মে তথ্যের অমিল রয়েছে মর্মে অভিযানকালে দেখা যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৮টি রিপার মেশিন (প্রতিটির মূল্য এক লাখ ৯০ হাজার টাকা) বিতরণ দেখানো হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু গ্রাহকদের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলে জানা যায় যে, তারা রিপার মেশিনের জন্য আবেদন করলেও তাদের কোনো মেশিন দেওয়া হয়নি। অভিযানে প্রাপ্ত সব তথ্যাবলি সন্নিবেশ করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।  

অভিযান তিন: বরগুনা জেলার তালতলা ও আমতলী বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প ঘিরে কৃষকদের কাছ থেকে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরবরাহে অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালী থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে এনফোর্সমেন্ট টিম সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ থেকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এ সময় সরেজমিনে দৈবচয়নের ভিত্তিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনপ্রাপ্ত উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলা হয় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে দেখা যায়, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন প্রাপ্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত কিংবা চাকরিজীবী; তারা কেউই কৃষি কাজের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, অধিকাংশেরই কৃষি কার্ড নেই। টিম আরও জানতে পারে, মেশিন বরাদ্দপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই তাদের মেশিন বিক্রি করে দিয়েছেন, যা পুনরায় সংশ্লিষ্ট মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি কর্তৃক ক্রয় করা হয়েছে- যা পুরোপুরি বিধিবহির্ভূত। এছাড়াও নিকট আত্মীয়দের বরাদ্দ দেখিয়ে কেউ কেউ একাধিক মেশিনের মালিক হয়েছেন মর্মে জানা যায়। মেশিনের গায়ে চেসিস নম্বর এবং ইঞ্জিন নম্বর খোদাই আকারে লেখা থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায়, উক্ত নম্বর স্টিকার দিয়ে লাগানো। মেশিন বিতরণ এবং তদারকির ক্ষেত্রেও নানা অনিয়মের তথ্য পায় দুদক টিম। প্রাপ্ত নানাবিধ অনিয়ম সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর দাখিল করা হবে।

অভিযান চার: নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ময়মনসিংহ হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিম প্রথমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিস হতে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সরেজমিনে উপকারভোগীদের তথ্যাবলি যাচাই করা হয়। যাচাইপূর্বক সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নে একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে ১০টি উক্ত মেশিন বিতরণের তথ্য পাওয়া যায়, যে পরিবারের একজন কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও একই মেশিন দুইবার বিতরণ, নিকট আত্মীয়দের নাম দিয়ে একাধিক মেশিন পাওয়া, মেশিন প্রাপ্তির পরপরই বিক্রিসহ নানাবিধ অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অভিযান পাঁচ: ঢাকার দোহার উপজেলায় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প ঘিরে কৃষকদের কাছ থেকে ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরবরাহে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২ হতে উপজেলা কৃষি অফিস, দোহার, ঢাকায় একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে দুদক টিম উপজেলা কৃষি অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করে বর্ণিত ধান কাটার মেশিন তথা কম্বাইন্ড হারভেস্টার প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে কিনা সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র যাচাই করে। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে এবং প্রাথমিক যাচাইয়ে টিম বিতরণে অনিয়মের বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অভিযান ছয়: সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের মধ্যে বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, সিলেট হতে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে উপপরিচালকের দপ্তর হতে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। রেকর্ডপত্র প্রাথমিক যাচাইয়ে দেখা যায়, একই ব্যক্তি একাধিক কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন পেয়েছেন, আবার একই মোবাইল নম্বর দিয়ে একাধিক ব্যক্তি হারভেস্টার মেশিন নিয়েছেন। এছাড়া এক ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত হারভেস্টার মেশিন উপজেলা কৃষি অফিসারের যোগসাজশে অন্য ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে- এরূপ তথ্য পায় দুদক টিম। সার্বিক বিশ্লেষণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে মর্মে অভিযানকালে টিমের নিকট পরিলক্ষিত হয়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা সাপেক্ষে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৫
এসমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।