লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মধ্যে ‘এমবিসি ব্রিকস’ নামে অবৈধ একটি বাংলা ইটভাটা দেদারসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভাটাটির চারপাশে ফসলি জমি রয়েছে।
এছাড়া ইটভাটার তাপে আশেপাশে থাকা গাছাপালা ঝলসে গেছে। ভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য যে লাড়কি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো টুকরো করার জন্য ভাটার মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। পাশেই থাকা ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিয়ে আসা হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণ ও ধ্বংসের জন্য যত আয়োজন, সবি আছে ওই ইটভাটাতে। টিনের চিমনি হওয়ায় ইটভাটার কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ইটভাটার পাশে থাকা বেড়িবাঁধের দুপাশে লাগানো রয়েছে বন বিভাগের সারিসারি গাছপালা। আর চারপাশেই ফসলি জমির পাশাপাশি রয়েছে বসতবাড়ি এবং ফলদ ও বনজ বাগান। ইটভাটার সামনে থাকা বেড়িবাঁধ দিয়ে জনগণের যাতায়াতের পথ বিনষ্ট করে দিয়েছে ভাটায় চলাচলকৃত যানবাহনের চাকা। ফলে বালু এবং কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। রোগবালাইয়ে ভুগছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিয়মনীতি কিংবা আইনের তোয়াক্কা না করে গত চার-পাঁচ বছর ধরে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বাংলা এ ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন বেলাল ও মানিক নামে দুই ব্যক্তি। স্থানীয়দের কাছে নিজেকে বিরাট প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করেন তারা।
ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসলহানি কিংবা গাছপালা ঝলসানো এবং ফসল বিনষ্ট হলেও সাহস করে কেউ প্রতিবাদ করছে না। তবে সাংবাদিকদের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা পরিবেশ দূষণ ও ফসলহানিসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে ইটভাটার যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া রাস্তার ধুলোবালিতে গোটা এলাকা বিবর্ণ হয়ে গেছে। খাবার খেতে গেলেও বালু খেতে হয়।
আরেক বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ইটভাটার কারণে আমরা সর্বক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কৃষি হয় না, গাছপালাও হয় না। আগে যে সব নারিকেল গাছে নারিকেলের ফলন হতো, সেগুলোতে এখন নারিকেল হয় না। সুপারি হয় না। ইটভাটার তাপে ফলদ গাছের ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এতে ফলন ধরে। গাছপালা ঝলসে গেছে, বিবর্ণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম ভূইয়া বলেন, ফসলি জমির মাটি সব ইটভাটায় কেটে নিয়ে যায়। এতে জমি নিচু হয়ে পড়ে। পানি জমে থাকে। ফসল হয় না।
আরেক কৃষক শামছুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার কারণে ক্ষেতের ফসল জ্বলে যায়। মানব দেহেরও ক্ষতি হচ্ছে। রোগ-বালাই লেগেই থাকে।
স্থানীয় যুবদল নেতা আবু তাহের বলেন, এ এলাকায় তিনটি ইটভাটা রয়েছে। একটি বাহার কোম্পানির, একটি মফিজ কোম্পানির, একটি আলাউদ্দিন মানিকের। এসব ইটভাটার কাঁচামাল এবং ইট বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পরিবহন করা হয়। এ কারণে পুরো রাস্তা এবং এলাকাজুড়ে বালু ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। চরম দুর্ভোগে আছি। ভাতের সঙ্গে বালু খেতে হয়। এসব বিষয়ে তাদের বললেও কর্ণপাত করে না। উল্টো আমাদের তারা প্রভাবশালীদের ভয় দেখায়।
এমবিসি ভাটা মালিক মো. মানিকের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনারা নিউজ করেন। ইটভাটা বন্ধ করে দেন। আমাদের ইটভাটায় পাঁচ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ভাটা না থাকলে শ্রমিকরা চুরি-ডাকাতি করত।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, ইটভাটায় মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। আমরা ইটভাটাগুলোর বিষয়েও খোঁজ খবর নিচ্ছি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। সদর উপজেলার অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। ‘এমবিসি ব্রিকস’ অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করব।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫
এসআরএস