ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুলের পরিবারের পাশে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৫
অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুলের পরিবারের পাশে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন  শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়ার হাতে তিন লাখ টাকার চেক তুলে দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি নন্দিত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমুল হাই ও বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ আবু তৈয়ব

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে খাবার ও পানি পৌঁছে দিচ্ছিলেন নাজমুল কাজী। স্ত্রীর কাছে বলে গিয়েছিলেন, তিনি শিগগির ঘরে ফিরে আসবেন।

ফেরেন, তবে লাশ হয়ে। নাজমুল কাজীর মতো শত শত প্রাণের বিনিময়ে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারমুক্ত হয় বাংলাদেশ। সেই শহীদ নাজমুল কাজীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ফাউন্ডেশনটি।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানার হাতে সহায়তার অর্থ হস্তান্তর করা হয়।

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা ও আড়াই বছরের কন্যা আরিয়ানা কাজী নুজাইরার জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।  

অনুষ্ঠানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়ার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক সহায়তার তিন লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি নন্দিত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমুল হাই, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ আবু তৈয়বসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  শহীদ নাজমুল কাজীর স্মৃতিচারণ করেন তার স্ত্রী মারিয়া সুলতানা, পাশে তার ছোট্ট মেয়ে আরিয়ানা কাজী।  ছবি: জিএম মুজিবুরঅনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্যে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা বলেন, যে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে নাজমুল কাজী দেশমাতার জন্য জীবন দিয়েছেন, তা চিরদিন স্মরণীয় থাকবে। তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি নাজমুল কাজীর পরিবারকে প্রয়োজনে আরও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমুল হাই বলেন, দেশের জন্য আত্মত্যাগকারীদের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা সবসময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন।

শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। আজ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছে, তার আত্মত্যাগ জাতি ভুলে যায়নি। এই সহায়তা আমাদের নতুন করে বাঁচার শক্তি ও সাহস দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বৈষম্য দূর করার জন্যই আমার স্বামী জীবন দিয়েছেন। যে আমার জীবনে ছাদ ছিল, সে ছাদটি সরে গেছে। দেশের জন্য, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন। যেখানে আমার স্বামীকে দাফন করা হয়েছে সেখানে যেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ করে দেওয়া হয়। যাতে মানুষ জানতে পারে আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। যেন আমার সন্তান সেখানে গিয়ে বাবাকে স্মরণ করতে পারে।

মারিয়া সুলতানা যখন তার স্বামীকে নিয়ে কথা বলছিলেন, তার পাশে দুই বছর বয়সের ছোট্ট নিষ্পাপ আরিয়ানা কাজীর চাহনি যেন জানান দিচ্ছিল, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই সহায়তা তার ভবিষ্যৎ গড়ার পথে ভরসা তৈরি করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মহানুভবতার প্রতীক। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগকারীদের পরিবারকে সম্মান জানিয়ে তারা দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে। শহীদ নাজমুল কাজীর পরিবার নতুন আশায় পথচলা শুরু করেছে, আর এই মানবিক উদ্যোগ দেশবাসীর হৃদয়ে এক অনন্য স্থান করে নিয়েছে। স্মার্টফোনে স্বামী শহীদ নাজমুল কাজীর সঙ্গে তোলা ছবি দেখাচ্ছেন স্ত্রী মারিয়া সুলতানা।  ছবি: জিএম মুজিবুরযেভাবে শহীদ হন নাজমুল কাজী
১৮ জুলাই নাজমুল কাজী জানতে পারেন, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় আন্দোলনকারীদের জন্য পানি ও শুকনা খাবার প্রয়োজন। তাই দেরি না করে মোহাম্মদবাগের বাসা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে কিছু পানির বোতল ও শুকনা খাবার নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে বিতরণ করেন নাজমুল।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে থাকা সরকার সমর্থক অস্ত্রধারীরা তাকে ব্যাপক মারধর ও ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান দুই পথচারী। কিন্তু তৎকালীন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আন্দোলনে আহত কাউকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত একটি রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় নাজমুলকে। পরে স্ত্রী মারিয়া খবর পেয়ে বিকেল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে এক সারিতে পাঁচজনের লাশ দেখতে পান। এর মধ্যে একজন ছিলেন তার স্বামী নাজমুল কাজী।

নাজমুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। বাবা সেলিম কাজী ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। শহীদ হওয়ার ৪-৫ বছর আগে থেকে মোহাম্মদবাগ এলাকায় কাপড়ের কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন নাজমুল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।